লজ্জা ও সামাজিক (সোশ্যাল)ফোবিয়া

Shyness and social phobia

সূচনাঃ

যাঁর পক্ষে লজ্জা অত্যন্ত অস্বস্তিকর বা যাঁর সোশ্যাল ফোবিয়া আছে, তিনি এই পুস্তিকা ব্যবহার করতে পারেন। আত্মীয় বা বন্ধুরা যাঁরা এ বিষয়ে জানতে চান, তাঁরাও এই পুস্তিকা ব্যবহার করতে পারেন।


সোশ্যাল ফোবিয়া কাকে বলে?

লজ্জা একধরনের অস্বস্তি যা আমাদের অনেকের হয়ে থাকে।অল্পস্বল্প হলে এতে বিশেষ অসুবিধা হয় না। আমাদের অনেকের অপরিচিত লোকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে লজ্জা করে, কিন্তু প্রাথমিক আড়ষ্টতা কেটে গেলে আমরা স্বচ্ছন্দ বোধ করি, এমনকি উপভোগও করতে পারি তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা।

ফোবিয়া একধরনের ভয়। আমাদের অনেকের মাকড়সা দেখলে ভয় হয় বা উঁচু জায়গায় দাঁড়ালে মাথা ঘুরে যায়।তবে সাধারণতঃ এতে আমাদের দৈনন্দিন কাজের ব্যাঘাত হয় না। ভয় তখনি ফোবিয়া হয়ে দাঁড়ায় যখন এর ফলে আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়।

আপনার সোশ্যাল ফোবিয়া থাকলে আপনি অচেনা লোকের সামনে খুব অস্বস্তিবোধ করবেন। আপনার মনে হবেঃ

  •  সবাই আপনাকে অপছন্দ করছে
  •  আপনি এখনি কী করতে কী করে বসবেন  

এই অনুভূতি এতই কষ্টকর হতে পারে যে আপনি হয়ত লোকের সঙ্গে মেলামেশাই করতে পারবেন না। সব সামাজিক অনুষ্ঠান আপনি এড়িয়ে যাবেন।

এই পুস্তিকাতে লেখা আছে যে সোশ্যাল ফোবিয়া হলে কী ধরনের উপসর্গ হয়, আপনি নিজে কীভাবে এই কষ্ট কমাতে পারেন এবং কোথায় আরো তথ্য এবং সাহায্য পাবেন।  

প্রধানতঃ দুধরনের সোশ্যাল ফোবিয়া দেখা যায়ঃ

সাধারণ (বা জেনেরালাইজেড) এবং স্পেসিফিক


জেনেরাল সোশ্যাল ফোবিয়াঃ

এতে আপনিঃ 

  • মনে করেন যে লোকে আপনার দিকে তাকিয়ে দেখছে
  • মনে করেন যে তাঁরা আপনি কী করছেন না করছেন তার উপর নজর রাখছে
  • অপরিচিত লোকের সঙ্গে আলাপ করতে চাইছেন না
  • দোকানে বা রেস্তোরাঁতে যেতে চাইছেন না
  • লোকের সামনে খেতে অসুবিধা হচ্ছে
  • স্বল্প পোশাকে বাইরে বেরোতে চাইছেন না (যথা সমুদ্রের ধারে)
  • প্রয়োজন সত্ত্বেও স্পষ্ট করে নিজের মনোভাব জানাতে দ্বিধাবোধ করছেন

 

পার্টিতে যাওয়া বিশেষ করে অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। মনে মনে চাইলেও আমরা অনেকেই ঘরভর্তি লোকের সামনে যেতে দ্বিধাবোধ করি। সোশ্যাল ফোবিয়া থাকলে আপনি ঘরেও দোরগোড়াতেই দাঁড়িয়ে থাকবেন, ভিতরে ঢুকতে কুন্ঠাবোধ করবেন। এতে সকলে ভাবতে পারে যে আপনার ক্লস্ট্রোফোবিয়া(বদ্ধ ঘরে ফোবিয়া)আছে। শেষমেষ আপনি যখন ঘরে ঢুকলেন, তখন আপনার মনে হবে যে সবাই আপনাকে দেখছে। অনেকে পাব বা পার্টিতে যেতে গেলে তার আগে মদ্যপান করে নেন যাতে একটু রিল্যাক্সড বোধ করেন এবং পার্টিটা উপভোগ করেন।


স্পেসিফিক সোশ্যাল ফোবিয়াঃ

এটি দেখা যায় কিছু লোকের মধ্যে যাঁদের কাজের ধরনই এমন যে তাঁদের মধ্যমণি হতে হয়। নায়ক, গায়ক, শিক্ষক বা ইউনিয়নের নেতা প্রমুখরা এই দলের অন্তর্ভুক্ত। স্পেসিফিক সোশ্যাল ফোবিয়া থাকলে লোকের সঙ্গে মেলামেশা করতে কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু সবার সামনে যখন দাঁড়িয়ে কথা বলতে বা গান গাইতে গেলে টেনসন হয় এবং কেউ কেউ তোতলাতে থাকেন। এমনকী যাঁরা অভিজ্ঞ, এবং এই কাজ প্রায়ই করে থাকেন তাঁদের হঠাৎ এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এমনও হতে পারে যে লোকের সামনে একটাও কথা বলা যায় না, একটা প্রশ্ন অবধি করা যায় না।


কী রকম অনুভূতি হয়?

দুধরনের ফোবিয়াতেই স্ট্রেসের উপসর্গ দেখা দেয়। আপনি দেখবেন যে আপনিঃ

  • খুব চিন্তা করছেন যে লোকের সামনে অস্বাভাবিক কোনো আচরণ না করে ফেলি
  • যেখানে যেতে আপনার মন চাইছে না, সে বিষয়ে সবসময় ভেবে যাচ্ছেন
  • মনে মনে ভাবছেন কবে কখন কোন পরিস্থিতিতে আপনি লজ্জায় পড়েছিলেন
  • আপনি যা করতে চান বা বলতে চান তা পারছেন না
  • একটা ঘটনার পর বার বার ভাবছেন ‘কী করলাম, কী করলাম’

আপনি হয়ত বার বার পুংখানুপুংক্ষ ভাবে নিজের মনে ভাববেন কী করা উচিৎ ছিল বা বলা উচিৎ ছিল।

 

এই দুধরনের সোশ্যাল ফোবিয়াতেই কিছু শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন ধরুনঃ

  • মুখ শুকিয়ে যাওয়া
  • অতিরিক্ত ঘামা
  • বুক ধড়ফড় করা
  • বারবার পেচ্ছাপ বা পায়খানা পাওয়া
  • হাত বা পা ঝিমঝিম করা বা অসাড় হয়ে যাওয়া (এটি হয় কারণ আপনি খুব দ্রুত নিশ্বাস নিচ্ছেন)


অন্যেরা হয়ত আপনাকে দেখে বুঝতে পারবেন যে আপনি অস্বস্তিতে পড়েছেন। আপনি হয়ত লাল হয়ে যাচ্ছেন, তোতলাচ্ছেন বা আপনার হাত পা কাঁপছে।  এই উপসর্গগুলি আপনার ভীষণ ভয়ানক মনে হতে পারে এবং আপনার টেনসন আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

এরপর এটি বাড়তে থাকে চক্রাকারে। আপনি টেনসন নিয়ে টেনসন করেন এবং তাতেই আরো বেড়ে চলে আপনার টেনসন। আপনার চোখেমুখে ফুটে ওঠে এর অভিব্যাক্তি। আপনার টেনসনই আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু।  


প্যানিক

দুধরনের সোশ্যাল ফোবিয়াতেই প্যানিক হতে পারে। প্যানিক বেশিক্ষণ থাকে না, মিনিট কয়েক মাত্র থাকে। সাংঘাতিক দুশ্চিন্তা হয়, মনে হয় আপনি পরিস্থিতির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন। আপনার মনে হয় আপনি এবার হয় মারা যাবেন নয়ত পাগল হয়ে যাবেন। সচরাচর যে পরিস্থিতিতে এটি হয়েছে সেখান থেকে আপনি বেরিয়ে যাবার চেষ্টা করবেন। প্যানিকের অনুভূতি অত্যন্ত তীব্র কিন্তু ক্ষণস্থায়ী, এটি কেটে গেলে আপনি ক্লান্ত বোধ করবেন। প্যানিক যতই ভয়প্রদ হোক না কেন, এতে আপনার শারীরিক কোনো ক্ষতি হবে না এবং নিজের থেকেই এটি কমে যাবে।


কিভাবে এতে জীবন প্রভাবিত হয়?

অনেকে নিজেদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে এই সমস্যার মোকাবিলা করেন। এর অর্থ তাঁরা এবং তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যেরা যা করতে ভালবাসতেন তা অনেক সময় না করা। তাঁরা বাচ্ছার স্কুলে যেতে পারেন না, ডেন্টিস্টের কাছে যেতে পারেন না বা বাজার করতে যেতে পারেন না। এমনকী তাঁরা অনেক সময় নিজেদের পদোন্নতিতেও বাধা দেন যদিও তাঁদের পক্ষে চাকরির উন্নতির পথে আর কোনো বাধা নেই। যাঁদের সোশ্যাল ফোবিয়া থাকে তাঁদের অর্ধেকের বেশি (বিশেষত; পুরুষরা) দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন না।

 

এতে কজন আক্রান্ত হয়?

একশো জনের মধ্যে পাঁচ জনের সোশ্যাল ফোবিয়া থাকে। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি দুতিনগুণ বেশি দেখা যায়।


এর থেকে আর কী হতে পারে?

বিষাদরোগ

সোশ্যাল ফোবিয়া থেকে বিষন্নতার জন্ম হতে পারে। শেই বিষাদরোগ এত বেশি তীব্র হতে পারে যে তার জন্য আলাদা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।


আগারোফোবিয়া

আপনি যদি সবসময় যেখানে মানুষ আছে সেই জায়গায় না যান তবে এই জায়গাগুলির প্রতি আপনার ভীতি জন্মাতে পারে। এমনকী আপনি নিজের বাড়ী ছেড়ে বেরোতেও ভয় পেতে পারেন—তাকে বলে আগারোফোবিয়া।


মদ ও অন্য নেশা

আপনি হয়ত আপনার মনের কষ্ট লাঘব করতে মদ, ড্রাগ বা ঘুমের ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে আপনি মাদকাসক্ত হয়ে যেতে পারেন।


শারীরিক স্বাস্থ্য

প্যানিক এবং চিন্তা সত্ত্বেও হার্টের অসুখের সম্ভাবনা কিন্তু অন্যদের সঙ্গে সমান, বেশি না।

 

কেন সোশ্যাল ফোবিয়া হয় ?

আমরা সঠিক জানিনা। এতে বেশি আক্রান্ত হয় তাঁরা যাঁরা

  • লোকসমক্ষে নিজেদের ব্যবহার সম্পর্কে অতি মাত্রায় সচেতন
  • অল্পবয়সে তোতলামিতে ভুগতেন

তিন থেকে সাত বছর বয়সে এই ধরনের লজ্জা স্বাভাবিকভাবেই সকলের মনে জাগে। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে জীবনের এই অধ্যায় থেকে এগোতে না পারলে সোশ্যাল ফোবিয়া জন্ম নেয়।


এই অসুবিধা না কাটবার কারণ কী ?

চিন্তা

সামাজিক পরিস্থিতিতে কিছু চিন্তা মনে আসে। যেমন ধরুনঃ

  • ‘আমায় সবসময়ে সবাই বুদ্ধিমান ভাববে পরিস্থিতি যেন আমার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে’
  • ‘আমি খুব বোরিং’
  • ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা—কেউ আমায় চিনলে সে বুঝতে পারবে আমি কেমন অপদার্থ

আপনি সব সময় নিজের ব্যবহার পুংখানুপুঙ্খভাবে বিচার করছেন এবং নিজের খামতিগুলো দেখছেন। 

এই চিন্তা এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত যে আপনি এগুলি সত্য মনে করেন, যদিও এর সপক্ষে কোনো যুক্তি নেই।  আপনার নিশ্চিত ধারনা হয় যে সবার চোখে আপনাকে খারাপ লাগছে। অন্যলোকেরা প্রায় সব ক্ষেত্রেই আপনার সম্পর্কে অন্যরকম ধারনা মনে পোষণ করেন।

 

সাবধানতা অবলম্বন

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আপনি কিছু কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে থাকেন। যথাঃ

  • মদ্যপান
  • কারো চোখে চোখ না মেলানো
  • নিজের সম্পর্কে কোনো কথা না বলা
  • অন্যকে বেশি প্রশ্ন করা

এর ফলে আপনি কোনোদিন জানতেই পারেন না যে এই সাবধানতা অবলম্বন না করলেও আপনার কল্পিত ভয়ানক পরিণতি হয় না।  

 

ঘটনার আগে এবং পরে যে চিন্তা হয়

একই ঘটনার আগে এবং পরে বারংবার চিন্তা করলে আপনার আরো বেশি নিজের দোষ চোখে পড়ে। আপনার ভ্রান্ত বিশ্বাস আরো বদ্ধমূল হয়। 

 

সাহায্যের পথ

কারো সোশ্যাল ফোবিয়া হলে নানাভাবে তাঁকে সাহায্য করা যায়। প্রয়োজন অনুযায়ী নীচের টিপসগুলি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

 

আপনি নিজে কী করতে পারেন

  • আপনি স্বভাবতই লাজুক হলে লোকাল কোনো আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কোর্স করতে পারেন।
  • রিল্যাক্স করতে শিখুন। বই, টেপ, সিডি, ডিভিডি সব পাওয়া যায় রিল্যাক্সসেসান পদ্ধতি শেখানোর। আপনি দুশিন্তা শুরু হলেই রিল্যাক্স করলে বাড়াবাড়ি আটকে দিতে পারবেন।
  • আপনার দুশ্চিন্তাগুলি লিখে রাখুন। আপনার সম্পর্কে যে ছবি ফুটে উঠছে, লিখে রাখলে তার পরিবর্তন করা অপেক্ষাকৃত সহজ।
  • আপনি নিজে মনে মনে কী ভাবছেন সেকথা চিন্তা  না করে লোকে কী বলছে তা শোনার চেষ্টা করুন।
  • যে সাবধানতা আপনি অবলম্বন করেন, সেটা বন্ধ করুন। যেটি সহজতম সেটি দিয়েই শুরু করুন।
  • কোনো ভয়জনক পরিস্থিতি হলে তাকে ছোটো ছোটো ধাপে ভেঙ্গে দেখুন। প্রথম ধাপটি অভ্যাস করুন। অভ্যস্ত হতে সময় লাগতে পারে। অভ্যস্ত হয়ে গেলে পরের ধাপে এগোন। তারপর তার পরের ধাপে। এমনি করে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলুন।

সোশ্যাল ফোবিয়ার যে সেলফ হেল্প বই আছে, তার সাহায্য নিলে উপকার পাবেন। আমাদের ইংরাজী পুস্তিকার শেষে এর বিশদ তালিকা আছে।

 

সাইকোলজিকাল চিকিৎসা

সোশ্যাল স্কিলের প্রশিক্ষণ

এতে আপনি লোকজনের সামনে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। আমরা কিছু কিছু জিনিষ সহজাত মনে করি, যথা অপরিচিত কারো সঙ্গে কীভাবে কথা শুরু করা যায়। এখানে সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আপনি অন্যের সাহায্য নিয়ে শুরু করতে পারেন। লোকে ভিডিওতে নিজেদের দেখে বুঝতে পারেন, তাঁরা কেমন ব্যবহার করছেন বা অন্যের চোখে তাঁকে কেমন দেখাচ্ছে। 

 

গ্রেডেড সেলফ এক্সপোজার

আমরা জানি যে যে কোনো পরিস্থিতে শুরুর দিকে বেশি ভয় করে, খানিক বাদে সেই ভয় ভাঙ্গতে শুরু করে। এইজন্য ধাপে ধাপে  এগোলে ভয় কাটানো যায়।

 

আপনি কোন কোন পরিস্থিতিতে ভয় পান, তার একটা তালিকা তৈরি করুন। তারপর এদের পরপর সাজিয়ে নিন। সবার আগে রাখুন যে পরিস্থিতিতে আপনি সবচেয়ে কম ভয় পান, এবং সবার শেষে রাখুন যে পরিস্থিতি আপনার কাছে সবচেয়ে ভয়প্রদ। সবচেয়ে সহজ পদক্ষেপটি নিন আপনার থেরাপিষ্টের সাহায্যে। যতক্ষণ না আপনি স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন ততক্ষণ পরের ধাপে যাবেন না। স্বচ্ছন্দ বোধ করলএ পরের ধাপে যান।  এক এক করে এগোলে সবচেয়ে ভয়ের পরিস্থিতিও আপনি সামলাতে পারবেন।  

 

কগ্নিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি (সিবিটি)

আপনার নিজের সম্বন্ধে, চারপাশের মানুষজন সম্বন্ধে এবং পৃথিবী সম্বন্ধে যা ধারণা তার সঙ্গে সোশ্যাল ফোবিয়ার গভীর সংযোগ আছে। আমাদের চিন্তাপদ্ধতি আমাদের দুশ্চিন্তাকে ইন্ধন যোগায়। এই চিকিৎসাতে আপনার নিজের সম্পর্কে এবং অন্যদের সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন হবে।  

আপনার থেরাপিষ্ট আপনাকে দেখতে সাহায্য করবেঃ

  •  আপনার দুর্ভাবনা, ভবিষ্যৎ নিয়ে অযথা শঙ্কা, এবং জল্পনা। এই চিন্তা মাথাতে এলে আপনার কেমন শারীরিক অনুভূতি হয়।
  •  যে অযথা সাবধানতা আপনি  অবলম্বন করেন। (উপরে দেখুন) 
  •  আপনার চিন্তা কীভাবে আপনার ব্যবহারকে প্রভাবিত করে।

 

যেমন ধরুন  কথাবার্তা চলছিল, খানিক বাদে উভয়পক্ষই নীরব হয়ে গেল, কারো আর কিছু বলার নেই। আপনার সোশ্যাল ফোবিয়া থাকলে আপনার মনে হবে ‘ আমার কখনোই কিছু বলার থাকে না। আমি ঠিকমত সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে পারি না।’ একথা ভেবে আপনার দুশ্চিন্তার পারদ চড়তে থাকে। সিবিটিতে আপনার থেরাপিষ্ট আপনাকে দেখাতে চেষ্টা করবেন যে অপরপক্ষেও কিছু বলার নেই। এই ভাবনা অনেক বেশি বাস্তবানুগ এবং কম দুশ্চিন্তাজনক। তারপর থেরাপিষ্ট আপনাকে দৈনন্দিন জীবনে এই কথার সত্যতা যাচাই করতে বলবেন।

তাহলে আপনি দেখতে পারবেন সত্যি সত্যি অন্যেরা আপনার সঙ্গে কীধরনের ব্যবহার করছেন, নিজের কল্পিত ভয়ভাবনার মধ্যে আপনি ডুবে থাকবেন না। ধরুন, আপনার থেরাপিষ্ট আপনাকে বললেন যে আপনি এমন ভাবে কথা বলুন যেন আপনাকে বুদ্ধিমান মনে হয়। আপনি চেষ্টা করলেন, কিছুক্ষণ বাদে থেমে আবার চেষ্টা করলেন। দ্বিতীয়বার  চেষ্টার সময় আপনি নিজের কথা না ভেবে থেরাপিষ্ট আপনার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করছেন সেদিকে মনোযোগ দেবার চেষ্টা করুন।

আরো পদ্ধতি আছে। যেমন ধরুন আপনি কথাবার্তার উপরে মনোনিবেশ করুন, স্ট্রেসজনিত আপনার শারীরিক উপসর্গের উপর না করে।   

একজন থেরাপিষ্ট সাধারণতঃ একজনকে এইভাবে চিকিৎসা করেন। সমস্যা খুব গভীর হলে বা আপনি গৃহবন্দী হলে হাসপাতালে বা ডে হাসপাতালে আপনার চিকিৎসা সম্ভব।

 

ঔষধ

বিষাদপ্রতিরোধক ঔষধ

আপনি যদি সাইকলজিকাল চিকিৎসা না চান, সাইকোলজিকাল চিকিৎসা যদি কাজ না করে বা আপনার যদি তীব্র বিষাদরোগ থাকে, তবে ঔষধ প্রয়োগ করা উচিৎ। নতুন ঔষধ বিষাদপ্রতিরোধক (এসএসআরআই- সিলেক্টিভ সেরোটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটর) সোশ্যাল ফোবিয়াতে কাজ করে। প্রথম দিকে এই ঔষধ সেবনে কারো কারো মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরা দেখা দেয়। এরা সাধারণত; ছয় সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু করে, কিন্তু পুরোপুরি উপকারিতা পেতে বারো সপ্তাহ লাগতে পারে। উপসর্গ কমে গেলে বেশ কয়েক মাস ধরে ধীরে ধীরে ঔষধের মাত্রা কমানো হয়। অর্ধেক ক্ষেত্রে ঔষধ বন্ধ করলে ফিরে আসে সোশ্যাল ফোবিয়ার উপসর্গ। 

এসএসআরআই কাজ না করলে মাওআই (মোনোআমিন ওক্সিডেস ইনহিবিটর) ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু এগুলি ব্যবহার করলে অসুবিধা হতে পারে। এতে ব্লাডপ্রেসার কমতে পারে, আপনার খুব মাথা ঘুরতে পারে। কিছু খাবার যথা চীজ এই ঔষধের সঙ্গে সাংঘাতিকভাবে প্রতিক্রিয়া হয়। এইধরনের খাবার সবসময় বাদ দিতে হয় খাদ্যতালিকা থেকে। কাশির ঔষধ খেলেও কখনো কখনো এধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

নতুন কিছু  মাওআই পাওয়া যায় এখন তাদের বলে রিমা(রিভারসিবল ইনহিবিটরস অব মোনোএমিন অক্সিডেস এ)। এতে ঐধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না, তাই এই ঔষধ খেলে খাবার ব্যাপারে কোনো বিধিনিষেধ নেই।

এছাড়া আর অন্য বিষাদপ্রতিরোধক ঔষধ কাজ করে না সোশ্যাল ফোবিয়াতে।

 

বিটা ব্লকার

এগুলি সচরাচর ব্যবহার হয় ব্লাড প্রেসারের চিকিৎসার জন্য। অল্প মাত্রায় ব্যবহার করলে টেনসন সংক্রান্ত যে কাঁপুনি হয় তা কমে যায়। এটি সোশ্যাল ফোবিয়ার একটি উপসর্গ। লোকের সঙ্গে দেখা করার আগে বা বক্তৃতা দেবার আগে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

ট্রাঙ্কুইলাইজার

আগে ভ্যালিয়াম জাতীয় ঔষধ ব্যবহার হত স্ট্রেসের চিকিৎসার জন্য। এখন আমরা জানি যে এগুলিতে নেশা হয়ে যায়, এবং কোনো দীর্ঘস্থায়ী সুফল পাওয়া যায় না। সোশ্যাল ফোবিয়ার চিকিৎসার জন্য এসব ব্যবহার করা ঠিক নয়।

 

চিকিৎসায় কতটা কাজ দেয় ?

সেলফ হেল্প বই খানিকটা সাহায্য করতে পারে। থেরাপিষ্টের সাহায্য ছাড়া খুব বেশি কিছু করা যায় না। যদি আপনার সামাজিক পরিস্থিতে অসুবিধা হয়, এই বই ব্যবহারে উপকার পেতে পারেন।

সেলফ হেল্প গ্রুপে আরো ভাল ফল পাওয়া যায়, তবে এটি অপেক্ষাকৃত নতুন পদ্ধতি।
গ্রেডেড সেলফ এক্সপোসারে যাঁরা কোর্স শেষ করেন, তাঁদের অর্ধেক উপকৃত হন। (তবে অনেকেই কোর্স শেষ করেন না)।
সিবিটি এসএসআরআই ঔষধের থেকে বেশি কাজ দেয়। ঔষধ ব্যবহারের আগে সিবিটি প্রয়োগ করা উচিৎ।

 

আরো জানতে চান ?

আপনি যদি আরো বিশদ জানতে চান, তাহলে আমাদের ইংরাজী পুস্তিকার শেষে তালিকা দেখতে পারেন সেখানে সেলফ হেল্প প্রতিষ্ঠান, বই, ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য তথ্য দেওয়া আছে।

Read more to receive further information regarding a career in psychiatry