ৎসোফ্রেনিয়

Schizophrenia

এই পুস্তিকার বিষয়ে

পুস্তিকাটি কাদের জন্য

  • যাঁকে বলা হয়েছে যে তাঁর স্কিৎসোফ্রেনিয়া হয়েছে
  • যাঁর মনে হয় তাঁর স্কিৎসোফ্রেনিয়া আছে
  • যাঁর বন্ধু বা আত্মীয়ের স্কিৎসোফ্রেনিয়া হয়েছে


এই পুস্তিকাতে আপনি জানতে পারবেন :

  • স্কিৎসোফ্রেনিয়ার লক্ষণ কী
  • কেন স্কিৎসোফ্রেনিয়া হয়
  • এর কী চিকিৎসা আছে
  • আপনি নিজে কী করতে পারেন
  • আত্মীয়দের জানবার বিষয়

স্কিৎসোফ্রেনিয়া শব্দটির ব্যবহার

স্কিৎসোফ্রেনিয়া শব্দটি মানুষ মারামারি আর অস্বাভাবিক আচরণের সঙ্গে সমার্থক মনে করে। মিডিয়া প্রায়ই এই অর্থে স্কিৎসোফ্রেনিয়া শব্দটি ব্যবহার করে, যদিও এটা ভুল এবং অন্যায়। আমরা স্কিৎসোফ্রেনিয়া শব্দটি ব্যবহার করি কারণ এই মুহুর্তে এর কোনো ভাল প্রতিশব্দ নেই যাতে এই ধরনের উপসর্গ আর আচরণের বর্ণনা দেওয়া যেতে পারে।
স্কিৎসোফ্রেনিয়া শব্দটি আপনার খারাপ লাগলেও আশাকরি এ সম্বন্ধে জানবার জন্য এই পুস্তিকাটি আপনাকে সাহায্য করবে।


স্কিৎসোফ্রেনিয়া কাকে বলে?

স্কিৎসোফ্রেনিয়া একটি মানসিক রোগ যা শতকরা একজনের হয়। পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে এই অসুখটির হার সমান। শহরাঞ্চলে এবং কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে এর হার বেশি। পনেরো বছরের নীচে সাধারণতঃ অসুখটি দেখা যায় না। তারপর যে কোনো বয়সে এই অসুখ দেখা দিতে পারে। সচরাচর ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সে অসুখটি শুরু হয়।

 

স্কিৎসোফ্রেনিয়ার লক্ষণ

স্কিৎসোফ্রেনিয়ার লক্ষণ অনেক সময়ে দুভাগে ভাগ করা হয় পজিটিভ এবং নেগেটিভ।

 

পজিটিভ বা ইতিবাচক লক্ষণঃ

এই অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা সচরাচর স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় দেখা যায়, যদিও অন্যান্য মানসিক রোগেও এই লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।

 

হ্যালুসিনেশান বা অমুল প্রত্যক্ষ

হ্যালুসিনেশান মানে আপনি কানে শব্দ শুনছেন, অথবা নাকে গন্ধ পাচ্ছেন, অথবা চোখে দেখতে পাচ্ছেন অথবা কোনো স্পর্শ পাচ্ছেন, যাঁর কোনো ভিত্তি নেই। অর্থাৎ  কোনো বস্তু বা প্রাণী এই শব্দ, গন্ধ স্পর্শ বা দৃশ্যর কারণ নয়। স্কিৎসোফ্রেনিয়াতে সবচাইতে বেশি হয় কানে আওয়াজ শোনা।

 

এই আওয়াজ কীরকম হয়?

আওয়াজগুলি একদম স্বাভাবিক আওয়াজের মত। মনে হয় বাইরে থেকে আওয়াজ আসছে, কিন্তু অন্যরা সে আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না। আপনি নানা জায়গা থেকে আওয়াজ পেতে পারেন। অথবা আওয়াজ আসতে পারে কোনো একটি জায়গা থেকে যথা টেলিভিসন। এই কন্ঠস্বরগুলি আপনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারে, অথবা তারা নিজেদের মধ্যে আপনার সম্পর্কে কথা বলতে পারে। মনে হতে পারে যে আপনি অন্যদের কথাবার্তা শুনে ফেলছেন। কখনো কখনো কন্ঠস্বরগুলি ভালভাবে কথা বলে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগুলি সমালোচনা করে, গালাগাল দেয়, বা অন্য কোনো ভাবে বিরক্তির কারণ হয়।

 

এতে মানুষের কী প্রতিক্রিয়া হয়?

কখনো কখনো মনে হয় যে তারা যা বলছে তা করতেই  হবে, এমনকি যদি তারা আত্মহত্যা করতে বলে তাহলে তাও করতে হবে। যদি তারা অন্যায় কাজ করতে বলে, তাহলে অন্যায় জেনেও তা করতে হবে। অনেক সময় এই কন্ঠস্বরগুলিকে পাত্তা না দিলেও চলে। কিন্তু সবসময় নয়।


এই আওয়াজ কোথা থেকে আসে?

এগুলি কাল্পনিক নয়, তবে এর উৎস নিজের মনই। মস্তিষ্কের কিছু অংশ সক্রিয় থাকে যখন আমরা কথা বলি বা নিজেদের মনে কোনো কথা ভাবি। ব্রেন স্ক্যান করে দেখা গেছে যে এই অংশগুলি সক্রিয় থাকে যখন কোনো মানুষ এই ধরনের আওয়াজ শোনেন। ভুলবশত; মস্তিষ্ক মনে করে আওয়াজ আসছে পরিবেশ থেকে, আসলে তা নিজের কথা কিংবা চিন্তা।

 

অন্য লোকে এরকম আওয়াজ শোনে কী?

অন্য মানসিক রোগ হলে, যথা তীব্র বিষাদরোগ হলে, এইধরনের আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। কন্ঠস্বরগুলি সরাসরি রুগীর সঙ্গে কথা বলে। এই কন্ঠস্বরগুলি সমালোচনা করে এবং বারবার এক কথা বলেই যায়।
কিছু মানুষ এই ধরনের আওয়াজ শোনেন কিন্তু তাতে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় না। সেগুলি ভাল কথা বলে, বেশি তীব্র নয় বা মাঝে মধ্যে এই আওয়াজ শোনা যায়। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।

 

অন্যান্য অমূল প্রত্যক্ষ (হ্যালুসিনেশান)

দৃষ্টিবিভ্রম অথবা স্পর্শ, গন্ধ কিংবা স্বাদের অনুভূতিও হতে পারে। তবে সেগুলি অপেক্ষাকৃত কম দেখা যায়।

 

বদ্ধমূল ভ্রান্ত ধারণা বা ডিলিউশান

এই ধারণা বদ্ধমূল হলেও এর কারণ কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতির ভূল বিশ্লেষণ। আপনার নিজের কোনো সন্দেহ না থাকলেও, লোকে মনে করে যে আপনার ধারনা ভ্রান্ত, ভিত্তিহীন বা অদ্ভুত। তাঁদের ধারনা যে এই প্রসঙ্গে আপনার সঙ্গে কোনো কথা বলা যায় না। যদি তাঁরা আপনাকে জিজ্ঞাসা করেন যে কেন আপনার এরকম ধারনা হলো, তাহলে তাঁরা সেই প্রশ্নের সদুত্তর পান না। হয় আপনার উত্তরের তাঁরা মানে বুঝতে পারেন না, নয়তো আপনি উত্তর দিতে পারেন না, আপনি 'জানেন' যে আপনার ধারনা ঠিক।

 

এটা কীভাবে শুরু হয়?

  • হঠাৎ করে আপনার মনে বদ্ধমূল ভ্রান্ত ধারনার জন্ম হয়। এর আগে হয়তো কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস ধরে আপনার মনে হচ্ছে যে আপনার চারপাশে অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা ঘটছে, কিন্তু আপনি জানেন না ঠিক কী  ঘটছে।
  • অথবা এমন হতে পারে যে আপনার মনে এই বদ্ধমূল ধারনার জন্ম হয় আপনার হ্যালুসিনেশানের জন্য। যেমন ধরুন আপনি কানে নানান আওয়াজ পাচ্ছেন যা অন্যেরা পাচ্ছেন না। তখন আপনার মনে হতে পারে যে কোনো গভর্মেন্ট সংস্থা আপনার উপর নজরদারি করছে। 

 

প্যারানয়ড ডিলিউশন

এই ক্ষেত্রে বদ্ধমূল ভ্রান্ত ধারনা হয় যে কেউ আপনাকে তাড়া করছে বা অন্য কোনো ভাবে হেনস্থা করবার চেষ্টা করছে। এগুলি হয়তো

  • অস্বাভাবিকঃ
    আপনার মনে হতে পারে যে এম১৫ বা গভর্মেন্ট আপনার পিছনে চর লাগিয়েছে। আপনার এমনও মনে হতে পারে যে আপনার প্রতিবেশিরা বিশেষ টেকনোলজি অথবা বিশেষ ক্ষমতার মাধ্যমে আপনার উপর প্রভাব ফেলছে।
  • দৈনন্দিনঃ
    আপনার হঠাৎ মনে হতে পারে যে আপনার স্বামী অথবা স্ত্রী অন্যের প্রতি অনুরক্ত। আপনি মনে করতে পারেন যে তাঁর ব্যবহারে আপনি কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখতে পেয়েছেন।অন্যেরা নিশ্চিত যে এমন মনে করবার কোনো কারণ নেই।

এই ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস খুব কষ্টকর আপনার পক্ষে। যদি আপনার ধারনা হয় যে আপনার নিকটজন আপনাকে লাঞ্ছনা করছেন তাহলে সেটা তাঁর (আপনার পরিবারের কোনো সদস্য) পক্ষেও কষ্টকর।

 

গরিমামন্ডিত ধারনা

সাধারন দৈনন্দিন জীবনের ছোটো খাটো ঘটনা হঠাৎ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মনে হতে পারে আপনার কাছে। হয়তো আপনার মনে হতে পারে যে টিভিতে বা রেডিওতে আপনার সম্পর্কে আলোচনা চলছে, কিংবা লোকে কোনো বিশেষভাবে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। হয়তো রাস্তার গাড়ির রঙের মাধ্যমে কেউ আপনার কাছে কোনো বার্তা পাঠাচ্ছে।

 

বদ্ধমূল ভ্রান্ত ধারনার মোকাবিলা

  • এগুলি আপনার আচার ব্যবহারকে প্রভাবিত করতে পারে আবার নাও করতে পারে।
  • এ ব্যাপারে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করতে আপনার অসুবিধা হতে পারে, কারণ আপনি জানেন যে তাঁরা আপনার কথা বুঝছে না।
  • অন্যেরা আপনার ক্ষতি করছে বা আপনাকে হেনস্থা করছে এরকম মনে হলে আপনি তাঁদের থেকে দূরে থাকতে চাইবেন। কখনো কখনো আপনি এত বিরক্ত হতে পারেন, যে আপনি তাদের আঘাত করবার কথা ভাবতে পারেন।
  • আপনি এর হাত থেকে বাঁচবার জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পালিয়ে বেড়াতে পারেন।

 

বিক্ষিপ্ত চিন্তা (থট ডিসর্ডার)

আপনার পক্ষে মনঃসংযোগ করা কঠিন হয়ে ওঠে। হয়তো ণীচের বর্ণিত কাজগুলি আপনি করতে পারছেন নাঃ 

  • টিভিতে একটা প্রোগ্রাম প্রথম থেকে শেষ অবধি দেখা
  • খবরের কাগজের কোনো খবর খুঁটিয়ে পড়া
  • কলেজে পড়াশুনো করা
  • অফিসে ঠিকঠাক কাজ করা

আপনার মন ইতঃস্ততঃ ঘুরে বেড়ায়। একটা চিন্তার সঙ্গে আরেকটার কোনো মিল থাকে না। দুয়েক মিনিট পরে আপনি প্রথম কী ভাবছিলেন, সেটাই ভুলে গেছেন। কেউ কেউ বলেন যে তাঁদের চিন্তা  'ধোঁয়া ধোঁয়া' হয়ে গেছে। 
এইভাবে চিন্তা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলে অন্যেরা আপনার কথার খেই ধরতে পারবেন না।

 

অন্যের দ্বারা পরিচালিত হবার অনুভূতি

আপনার মনে হতে পারে যেঃ

  • আপনার চিন্তা উধাও হয়ে গেল, কেউ যেন সেটা আপনার মন থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
  • আপনার চিন্তা আপনার নিজস্ব নয়, অন্য কেউ সেগুলি আপনার মনে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
  • আপনার শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই, কেউ আপনাকে পুতুলের মত বা রোবটের মত চালাচ্ছে।

মানুষ নানাভাবে তাঁদের এই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবার চেষ্টা করে। কেউ বলেন, তাঁদের মধ্যে কোনো যন্ত্র বসানো হয়েছে, বা টেকনোলজির মাধ্যমে (যথা টিভি রেডিও বা লেসার বিম ) তাঁদের পরিচালনা করা হচ্ছে।
আবার কেউ মনে করেন অপদেবতা, তুকতাক, ভূতপ্রেত, শয়তান বা ভগবান এইসব করছেন।

 

নেগেটিভ বা নেতিবাচক লক্ষণঃ

এগুলি ইতিবাচক লক্ষণের মত সহজে চোখে পড়ে না।

  • উৎসাহ, উদ্যম অনুভূতি সব একেবারে নি:শেষ হয়ে যায়। কোনো ব্যাপারে উচ্ছলতা বা উত্তেজনা থাকে না।
  • মনোসংযোগ করা যায় না। উঠে বাড়ি থেকে বাইরে বেরোনোর কোনো তাগিদ বোধ হয় না।
  • স্নান করা, কাপড় কাচা, এমনকী পরিচ্ছন্ন থাকাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
  • লোকের সঙ্গে থাকলে অস্বস্তি হতে পারে, কারণ বলার মত কোনো কথাই তো নেই।

অন্যদের বুঝতে অসুবিধা হতে পারে যে এগুলি অসুখের লক্ষণ, আপনি কেবলমাত্র কুঁড়েমি করছেন না। এটা আপনার এবং আপনার পরিবারের দুঃখের কারণ হতে পারে। আপনার পরিবারের মনে হতে পারে যে আপনার নিজের চেষ্টা করা উচিৎ। আপনি বলে বোঝাতে পারেন না... আপনি সেটা করতে পারছেন না। নেতিবাচক লক্ষণগুলি, ইতিবাচক লক্ষণের মত নাটকীয় না হলেও একই রকমের কষ্টকর।

 

যাঁদের  স্কিৎসোফ্রেনিয়া আছে তাঁদের সবার মধ্যে কী সব লক্ষণ দেখা দেয়?

না। কেউ আওয়াজ শুনতে পান, কিন্তু তাদের বিক্ষিপ্ত চিন্তা বা নেতিবাচক উপসর্গ থাকে না। কারো বদ্ধমূল ভ্রান্ত ধারনা থাকে, কিন্তু নেতিবাচক উপসর্গ থাকে না। কারো যদি শুধু বিক্ষিপ্ত চিন্তা আর নেতিবাচক উপসর্গ থাকে, তাহলে অনেক সময় বছরের পর বছর অসুখটির চিকিৎসা হয় না।

 

অন্তর্দৃষ্টির অভাব

কিছুদিন বাদে উপসর্গগুলি এত তীব্র হয়ে যায়, যে সেগুলি আপনার জীবন নিয়ন্ত্রণ করে। আপনার মনে হতে পারে, যে সবাই ভুল করছে, আপনি যা বোঝেন, তা আর কেউ বোঝে না।

 

বিষন্নতা

  • চিকিৎসার আগে স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত অর্ধেক রুগীর বিষন্নতা থাকে।
  • সাতজনের মধ্যে একজনের অন্য লক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে বিষন্নতার লক্ষণ থাকবে। এগুলি অনেক সময় নজরে পরে না, কারণ এগুলি নেতিবাচক লক্ষণ বলে মনে করা হয়।
  • আগে মনে করা হত যে স্কিৎসোফ্রেনিয়ার চিকিৎসার জন্য যে ঔষধ ব্যবহার তার ফলেই বিষন্নতা হয়। আসলে চিকিৎসার ফলে বিষন্নতা কমে।
  • আপনার যদি বিষন্নতা আর স্কিৎসোফ্রেনিয়া একসঙ্গে হয়, তাহলে সেকথা অন্যকে জানান। আপনার কথা তাঁরা যেন হাল্কাভাবে না নেন। আপনি বিষন্নতা বিষয়ক পুস্তিকা দেখুন, কী এর লক্ষণ, কী এর উপসর্গ, কী এর চিকিৎসা, এইসব বিস্তারিত তথ্য জানবার জন্য।

 

স্কিৎসোফ্রেনিয়ার কারণ কী?

আমরা সঠিক জানি না। অনেকগুলি কারণের সংমিশ্রণে স্কিৎসোফ্রেনিয়ার সৃষ্টি হয়। আলাদা আলাদা মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা কারণ থাকে।

বংশগত কারণঃ

স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত দশজনের মধ্যে একজনের মা কিংবা বাবার স্কিৎসোফ্রেনিয়া থাকে। যমজদের উপরে সমীক্ষা করে দেখা যায় যে বংশগত কারণ (জেনেটিক মেক-আপ) কতটা দায়ী আর বেড়ে ওঠার সময় পারিবারিক পরিবেশ কতটা দায়ী।

কিছু কিছু যমজদের জেনেটিক মেক-আপ এক। এরকম যমজদের  ক্ষেত্রে একজনের স্কিৎসোফ্রেনিয়া হলে অন্যজনের হবার সম্ভাবনা ৫০:৫০। ননআইডেন্টিকাল যমজদের জেনেটিক মেক-আপ আলাদা।  তাঁদের একজনের স্কিৎসোফ্রেনিয়া হলে অন্যজনের হবার সম্ভাবনা তাঁর অন্য ভাই কী বোনের চাইতে সামান্য বেশি।

যমজদের যদি দত্তক নেওয়া হয়, এবং তাঁরা আলাদা পরিবেশে বড় হন, তাহলেও উপরের কথাগুলি তাঁদের ক্ষেত্রে একই রকম ভাবে প্রযোজ্য। এর থেকে আন্দাজ করা যায় যে এই প্রভেদের কারণ বংশগত(অর্থাৎ জেনেটিক মেক-আপ), পরিবেশ নয়।  

 

স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত আত্মীয় সংখ্যাস্কিৎসোফ্রেনিয়া হবার সম্ভাবনা
কেউ নয়১০০ জনের মধ্যে ১ জন
বাবা বা মা১০ জনের মধ্যে ১ জন
যমজ (জীনগতভাবে এক)২ জনের মধ্যে ১ জন
যমজ (জীনগতভাবে পৃথক)৮০ জনের মধ্যে ১ জন

রিসার্চ বলে যে স্কিৎসোফ্রেনিয়া হবার সম্ভাবনা জন্য জীন দায়ী  (৫০ শতাংশ )। কোন কোন জীন এর জন্য  দায়ী তা আমরা সঠিক জানিনা।

 

মস্তিষ্কের ক্ষতি

আধুনিক ব্রেন স্ক্যানের মাধ্যমে দেখা যায় যে সুস্থ মানুষের মস্তিষ্কের তুলনায় স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের মস্তিষ্কে পার্থক্য থাকে। কিছু কিছু স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রুগীদের মস্তিষ্কের সব অংশ ঠিকমত গঠিত হয় না। এর কারণঃ

  • জন্মের সময় কিছু অসুবিধার জন্য শিশুর মস্তিষ্কে ঠিকমত অক্সিজেন যায় নি।
  • শিশু মাতৃগর্ভে থাকবার সময় মায়ের ভাইরাল ইনফেকশন হয়েছিল

 

ড্রাগের নেশা ও মদ্যপান

কখনো কখনো ড্রাগের নেশা করলে স্কিৎসোফ্রেনিয়া দেখা দেয়। এইসব ড্রাগের মধ্যে এক্সট্যাসি(ই), এলএসডি(আসিড), অ্যাম্ফেটামিন (স্পিড)এবং কোকেন। আমরা জানি যে অ্যাম্ফেটামিন ব্যবহার করলে স্কিৎসোফ্রেনিয়ার মত উপসর্গ দেখা দেয়, কিন্তু অ্যাম্ফেটামিন বন্ধ করলে এই উপসর্গগুলি চলে যায়। আমরা জানি না এই মাদকসেবনে দীর্ঘমেয়াদী অসুখের সূত্রপাত হয় কিনা, তবে আপনার জীনগত প্রবণতা থাকলে এর সূত্রপাত হতে পারে। যাঁদের স্কিৎসোফ্রেনিয়া আছে, তাঁদের মদ্যপান করলে বা মাদকদ্রব্য সেবন করলে অসুখের প্রকোপ বেড়ে যায়। কেউ কেউ স্কিৎসোফ্রেনিয়ার উপসর্গের মোকাবিলা করতে মদ বা মাদকদ্রব্য ব্যবহার করেন।

গাঁজা

  • গাঁজা সেবন করলে স্কিৎসোফ্রেনিয়া হবার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়, এটা এখন প্রমানিত।
  • এর সম্ভাবনা বেশি থাকে যদি আপনি অল্পবয়স থেকে গাঁজা ব্যবহার করেন।
  • যদি অল্পবয়দে অত্যধিক মাত্রায় সেবন করে থাকেন (৫০ বারের বেশি) তাহলে তার ফল আরো মারাত্মক। আপনার স্কিৎসোফ্রেনিয়া হবার সম্ভাবনা ৬ গুণ বেড়ে যায়।

 

স্ট্রেস

অনেক ক্ষেত্রে স্ট্রেসপূর্ণ কোনো ঘটনার পরে উপসর্গগুলির বাড়াবাড়ি  দেখা দেয়। এটি হয়তো আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনা যথা গাড়ীতে ধাক্কা লাগা, প্রিয়বিয়োগ, বা বাড়ি পরিবর্তন করা। এটা দৈনন্দিন স্ট্রেস থেকেও হতে পারে যথা পড়াশুনা বা কর্মক্ষেত্রে অসুবিধা। দীর্ঘমেয়াদী স্ট্রেস, যথা পারিবারিক অশান্তি এই অসুবিধাকে আরো বাড়িয়ে তোলে।

 

পারিবারিক অশান্তি 

একসময় মনে করা হত পারিবারিক সম্বন্ধ (এক সদস্যের সঙ্গে অন্যের যোগাযোগ) স্বাভাবিক না হলে স্কিৎসোফ্রেনিয়ার উৎপত্তি হয়। এর স্বপক্ষে কোনো যুক্তি নেই। তবে পারিবারিক অশান্তি স্কিৎসোফ্রেনিয়া বাড়ায়।

 

শৈশবে বঞ্চনার অভিজ্ঞতা

অন্যান্য মানসিক অসুখের মত শৈশবে বঞ্চনা এবং নিযাতনের অভিজ্ঞতা স্কিৎসোফ্রেনিয়া হবার সম্ভাবনা বাড়ায়।

 

পরিণতি

এখন স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত অনেক রুগীকেই কখনো হাসপাতালে যেতে  হয় না। তাঁরা চাকরিবাকরি করেন এবং দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়তে পারেন।

পাঁচজন স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে

  • একজন প্রথম স্কিৎসোফ্রেনিয়া হবার পাঁচবছরের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবেন
  • তিনজন ভাল হবেন কিন্তু তাঁদের কিছু কিছু উপসর্গ থাকবে। কখনো কখনো সেই উপসর্গগুলি বাড়বে।
  • একজনের অসুবিধা থেকেই যাবে।

 

চিকিৎসা না হলে কী হবে?

কারো কারো স্কিৎসোফ্রেনিয়ার একটি লক্ষণই থাকে (আওয়াজ শোনা)। সেক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি আওয়াজগুলি বেড়ে যায়, বা বেশি বিরক্তিকর হয়ে যায় বা আনুসঙ্গিক অন্য অসুবিধা দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। 

স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আত্মহননের প্রবণতা বাড়ে যদি কারো উপসর্গগুলি বেশি হয়, বিষন্নতা দেখা দেয়, চিকিৎসা না হয়, বা কেয়ার লেভেল কমানো হয়।

রিসার্চ বলে যে যত দেরী হয়, স্কিৎসোফ্রেনিয়ার চিকিৎসা শুরু করতে তত অসুখটার প্রকোপ বাড়ে। যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা যায়, তত ভাল ফল পাওয়া যায়।

 

তাড়াতাড়ি লক্ষণ নির্ণয় হয়ে চিকিৎসা শুরু হলেঃ

  • আপনার হাসপাতালে ভর্তি হবার সম্ভাবনা কমে
  • আপনার বাড়ীতে 'ইন্টেন্সিভ' চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা কমে
  • হাসপাতালে ভর্তি হলেও সেখানে থাকবার মেয়াদ কমে
  • আপনার পক্ষে কাজ করা এবং স্বাধীন জীবন যাপন করবার সম্ভাবনা বেশি থাকে

 

চিকিৎসা

আপনার যদি প্রথম স্কিৎসোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়, যত শীঘ্র সম্ভব ঔষধ শুরু করা দরকার। সাধারণতঃ এই কাজটি আপনার জিপিই করবেন।

আপনার হয়তো হাসপাতালে যাবার প্রয়োজন হবে না, তবে সাকায়াট্রিস্ট এবং কমিউনিটি মেন্টাল হেলথ টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন। এখন বাড়ীতেই কমিউনিটি টিমের সদস্যেরা অসুখ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করেন।

আপনাকে যদি হাসপাতালে যেতেও হয়, তা কয়েক সপ্তাহের জন্য মাত্র। তারপর বাড়ীতেই চিকিৎসা চলতে পারবে। সবচেয়ে কষ্টদায়ক উপসর্গগুলি ঔষধে নিরাময় হয়। তবে শুধু ঔষধে চিকিৎসা সম্পূর্ণতা পায় না। এটা প্রথম পদক্ষেপ, যাতে পরবর্তী সাহায্য নেওয়া যায়। বন্ধু এবং পরিবারের সহায়তা, মানসিক প্রস্তুতি, এবং অন্যান্য সার্ভিস (যথা হাউসিং, ডে কেয়ার, এবং রোজগারের উপায়) বিশেষভাবে প্রয়োজন।

 

ঔষধ

কেন ঔষধ খাবেন?

ঔষধ ব্যবহার করলে অসুখের তীব্রতা কমবে। আপনার জীবনযাত্রায় তার প্রতিফলন ঘটবে। ঔষধঃ

  • আস্তে আস্তে ডিলিউশন এবং হ্যালুসিনেশানের প্রকোপ কমাবে। কয়েক সপ্তাহ লাগে এই কাজ হতে।
  • আপনার চিন্তাভাবনায় স্বাভাবিকত্ব আসবে।
  • আপনার উদ্যম ফিরে আসবে, আপনি নিজের কাজ নিজে করবেন।

 

কীভাবে ঔষধ খেতে হয়?

  • ঔষধ বড়ি, ক্যাপসুল বা সিরাপ অবস্থাতে কিনতে পাওয়া যায়। নিয়ম করে দিনে বার বার ঔষধ খাওয়া মুশকিল, তাই এখন নতুন কিছু ঔষধ পাওয়া যায়, যা দিনে একবার খেলেই যথেষ্ট।
  • আপনার যদি রোজ মনে করে ঔষধ খেতে অসুবিধা হয়, তাহলে ইঞ্জেকশন নিলে আপনার সুবিধা হতে পারে। একে বলে ডিপো ইঞ্জেকশন। এটি দুসপ্তাহ অন্তর, কিংবা তিন সপ্তাহ অন্তর কিংবা চার সপ্তাহ অন্তর দেওয়া হয়। বেশিরভাগ ইঞ্জেকশনই পুরোনো 'টিপিকাল'         অ্যান্টিসাইকোটিক। কিন্তু এখন একটি নতুন 'এটিপিকাল' অ্যান্টিসাইকোটিক (রিস্পেরিডন) ইঞ্জেকশন পাওয়া যায়।

 

'টিপিকাল' অ্যান্টিসাইকোটিক

১৯৫০এর দশকে কিছু ঔষধ বাজারে আসে যেগুলি স্কিৎসোফ্রেনিয়ার লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে। এই ঔষধকে বলা হয় অ্যান্টিসাইকোটিক ঔষধ। এই পুরোনো ঔষধকে টিপিকাল অ্যান্টিসাইকোটিক বা প্রথম জেনেরেশনের অ্যান্টিসাইকোটিক বলা হয়। ডোপামিন নামক মস্তিষ্কের একটি রসায়নকে কমিয়ে এগুলি কাজ করে।    পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

  • পারকিনসন্স অসুখের মতন স্টিফ লাগতে পারে বা হাতে আর পায়ে কাঁপুনি হতে পারে। শ্লথভাব জাগতে পারে, এমনকী চিন্তাতেও শ্লথতা আসতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলি দেখা দেয় ঔষধের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে। ঔষধের মাত্রা কমিয়ে দিলে এই উপসর্গগুলির উপশম হয়। যদি আপনার বেশি মাত্রায় ঔষধের প্রয়োজন হয়, তাহলে অ্যান্টি-পারকিন্সনিয়ান ঔষধ দিয়ে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মোকাবিলা করা যায়।
  • অস্বস্তিকর অস্থিরতা(আকাথিসিয়া)
  • যৌনজীবনে অসুবিধা
  • অনেকদিন ঔষধ সেবন করলে টার্ডিভ ডিস্কাইনেসিয়া বলে একধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। মুখ এবং জিভ সবসময় নড়তে থাকে। যাঁরা দীর্ঘদিন ঔষধ সেবন করছেন, তাঁদের ২০ জনের মধ্যে ১ জনের এই অসুবিধা দেখা যায়।

 

কিছু টিপিকাল অ্যান্টিসাইকোটিকঃ    

ট্যাবলেটট্রেড নেমসাধারণ দৈনিক ডোজ (মিলিগ্রাম)ম্যাক্সিমাম দৈনিক ডোজ (মিলিগ্রাম)
ক্লোরপ্রোমাজিনলার্গাক্টিল৭৫-৩০০১০০০
হ্যালোপেরিডলহ্যালডল৩-১৫৩০
পিমোসাইডওরাপ৪-২০২০
ট্রাইফ্লুপেরাজিনস্টেলাজিন৫-২০ 
সাল্পিরাইডডল্ম্যাটিল২০০-৮০০২৪০০
আরিপিপ্রাজোলএবিলিফাই১০-৩০ 
ডিপো ইঞ্জেকশন(২-৪ সপ্তাহ অন্তর)ট্রেড নেমসাধারণ ডোজ  (২সপ্তাহ(অন্তর)ম্যাক্সিমাম ডোজ  (২সপ্তাহ(অন্তর)
হ্যালোপেরিডলহ্যালডল৫০ 
ফ্লুপেন্থিক্সল ডেকানোয়েটডেপিক্সল৪০ 
ফ্লুফেনাজিন ডেকানোয়েটমোডিকেট১২.৫-১০০ 
পিপোথায়াজিন পামিটেটপিপরটিল৫০ 
জুক্লোপেন্থিক্সল ডেকানোয়েটক্লোপিক্সল২০০ 

 

'এটিপিকাল' অ্যান্টিসাইকোটিকঃ

গত দশ বছরে অনেক নতুন ঔষধ বেরিয়েছে। এগুলি মস্তিষ্কে অন্যান্য রসায়নের উপর কাজ করে (যথা সেরোটনিন)। এই নতুন ঔষধকে এটিপিকাল অ্যান্টিসাইকোটিক বা দ্বিতীয় জেনেরেশনের অ্যান্টিসাইকোটিক বলা হয়। এই ঔষধে সচরাচর পার্কিনসন্স অসুখের মত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। তবে ওজন বাড়তে পারে এবং যৌনজীবনে অসুবিধা দেখা দিতে পারে। এগুলি নেগেটিভ লক্ষণগুলিকেও কমাতে সাহায্য করতে পারে। পুরোনো অ্যান্টিসাইকোটিক নেগেটিভ লক্ষণের উপর বিশেষ কাজ করে না। এই ধরনের ঔষধে টার্ডিভ ডিস্কাইনেসিয়া হবার সম্ভাবনাও কমে। যাঁরা নতুন ঔষধ ব্যবহার করেন, তাঁরা অনেকেই মনে করেন যে পুরানো ঔষধের তুলনায় নতুন ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম।

 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

  • ঘুম পাওয়া এবং শ্লথতা
  • ওজন বাড়া
  • যৌনজীবনে সমস্যা
  • ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা বাড়া
  • বেশি মাত্রায় ব্যবহৃত হলে টিপিকাল অ্যান্টিসাইকোটিকের মত পারকিন্সনিয়ান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া

কিছু এটিপিকাল অ্যান্টিসাইকোটিকঃ

ট্যাবলেটট্রেড নেমসাধারণ দৈনিক ডোজ (মিলিগ্রাম)ম্যাক্সিমাম দৈনিক ডোজ (মিলিগ্রাম)
এমিসাল্পিরাইডসোলিয়ান৫০-৮০০১২০০
ক্লোজাপিনক্লোজারিল২০০-৪৫০৯০০
ওলানজেপিনজাইপ্রেক্সা১০-২০২০
কোটায়াপিনসেরোকুয়েল৩০০-৪৫০৭৫০
রিস্পেরিডনরিস্পেরডাল৪-৬১৬
সেরটিন্ডলসেরডোলেক্ট১২-২০২৪
জোটেপিনজোলেপ্টিল৭৫-২০০৩০০

 

ডিপো ইঞ্জেকশন(২-৪ সপ্তাহ অন্তর)ট্রেড নেমসাধারণ ডোজ  (২সপ্তাহ(অন্তর)ম্যাক্সিমাম ডোজ  (২সপ্তাহ(অন্তর)
রিস্পেরিডনরিস্পেরডাল কনস্টা২৫৫০

 

ক্লোজাপিনঃ

  • এটি একটি এটিপিকাল অ্যান্টিসাইকোটিক। অন্যান্য অ্যান্টিসাইকোটিকে যখন কাজ হচ্ছে না, সেই অবস্থায় এটিই একমাত্র অ্যান্টিসাইকোটিক যাতে কাজ হয় বলে প্রমাণ রয়েছে। স্কিৎসোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার হার কমায়।
  • অন্যান্য এটিপিকাল অ্যান্টিসাইকোটিকের মত এটিরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। এছাড়াও এতে বেশি থুতু আসে মুখে।
  • সবচাইতে বেশি অসুবিধে হল এই যে এতে রক্ত তৈরী ব্যাহত হতে পারে। শ্বেতরক্তকনিকা কমে গেলে আপনার ইনফেকসন হবার সম্ভাবনা বাড়ে। তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ঔষধ বন্ধ করে দেখতে হবে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত তৈরী করবার ক্ষমতা ফিরছে কিনা। ক্লোজাপিন ব্যবহার করলে প্রতি সপ্তাহে একবার রক্তপরীক্ষা করতে হয় প্রথম ছমাস, তারপর দুসপ্তাহ অন্তর অন্তর এবং তারপর প্রতি চার সপ্তাহ অন্তর অন্তর।

 

এই ঔষধ ভাল কাজ দেবে কী?

  • অনেকের ক্ষেত্রে এই ঔষধটি খুব ভাল কাজ করে
    -- এটি সেবন করলে পাঁচ জনের মধ্যে চার জন উপকৃত হন।
    তবে এই ঔষধ অসুখটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, সারায় না। এই ঔষধটি আপনাকে ব্যবহার করে যেতে হবে, যাতে উপসর্গগুলি ফিরে না আসে।
  • ঔষধ ব্যবহার করলেও লক্ষণগুলি ফিরে আসতে পারে। তবে আপনি সুস্থ অবস্থাতে ঔষধ চালিয়ে গেলে এর সম্ভাবনা খুব কম হয়ে যায়।

 

 কতদিন ঔষধ খেতে হবে?

  • বেশির ভাগ সাকায়াট্রিস্ট মনে করেন আপনাকে দীর্ঘদিন ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
  • আপনি ঔষধ কমাতে চাইলে বা বন্ধ করতে চাইলে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
  • ঔষধ কমানোর সময় খুব ধীরে ধীরে কমাতে হয়। কোনো উপসর্গ ফেরত এলেই সাবধান হতে হয় সঙ্গে সঙ্গে, নাহলে আপনার আবার বেশি অসুস্থ হবার সম্ভাবনা থাকে।

 

ঔষধ বন্ধ করলে কী হবে?

ঔষধ বন্ধ করলে সাধারণতঃ

স্কিৎসোফ্রেনিয়ার লক্ষণ আবার দেখা   দেয়। তখন তখন না হলেও ছমাসের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষণ দেখা দেয় আবার।

 

স্বাভাবিক জীবনে ফেরা

আপনার পজিটিভ উপসর্গগুলি নিয়ন্ত্রণে এলে কী হয়? স্কিৎসোফ্রেনিয়ার জন্য দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম ব্যাহত হয়। কখনো কখনো এটি লক্ষণগুলির জন্য হয়। কখনো আবার জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় কারণ এত দীর্ঘদিন ধরে আপনি অসুস্থ ছিলেন যে নিত্যনৈমিত্তিক কাজ করবার অভ্যাস আপনার চলে গেছে। তখন স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরতে অসুবিধা হতে পারে। সাধারণ কাজ, যেমন কাপড় কাচা, ফোন ধরা, দরজা খোলা, বাজার করা বা বন্ধুর সঙ্গে গল্প করা সবই করতে অসুবিধা হতে পারে।


ঔষধ কী যথেষ্ট?

ঔষধ খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ হতে গেলে সাধারণতঃ অন্য সাহায্য দরকার হয়। এতে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরতে আপনার সুবিধা হবে।

 

সাইকোলজিকাল থেরাপি (কথা মাধ্যমে যেটা হয়)

কগ্নিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি


এটি ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট, সাকায়াট্রিস্ট বা নার্স থেরাপিস্ট করতে পারেন। তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন যাতে আপনিঃ

  • আপনার সমস্যা নির্ণয় করতে পারেন। আপনার চিন্তা, আপনার অভিজ্ঞতা অথবা আপনার ব্যবহার যে কোনো কিছুই আপনার সমস্যার কারণ হতে পারে।
  • আপনার চিন্তা প্রক্রিয়া বুঝতে পারেন অর্থাৎ  কোন পরিস্থিতিতে আপনি কীভাবে চিন্তা করেন তা বুঝতে পারেন।
  • আপনার কীরকম প্রতিক্রিয়া হয় তা বুঝতে পারেন অর্থাৎ  কোন পরিস্থিতিতে আপনি কীরকম ব্যবহার করেন তা বুঝতে পারেন।
  • আপনার চিন্তা কীভাবে আপনার ব্যবহারকে প্রভাবিত করে তা বুঝতে পারেন।
  • আপনার চিন্তা এবং ব্যবহার অবাস্তব বা অসুবিধাজনক কিনা সেটা অনুভব করতে পারেন।
  • আপনার চিন্তা ও ব্যবহারে সন্তোষজনক পরিবর্তন আনতে পারেন।
  • নতুনভাবে চিন্তা করতে পারেন এবং অন্যভাবে ব্যবহার করতে পারেন।
  • এতে কাজ হলে এই পরিবর্তন গ্রহণ করুন জীবনে। কাজ না হলে নতুন খাতে চিন্তা করে অন্য গ্রহণযোগ্য পরিবর্তনের কথা ভাবুন।

এই থেরাপির ফলে আপনার নিজের উপরে আস্থা বাড়বে, এবং আপনি নতুন ভাবে আপনার সমস্যার মোকাবিলা করতে শিখবেন। আমরা এখন জানি যে কগ্নিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি হ্যালুসিনেশন বা বদ্ধমূল ভ্রান্ত ধারণাতেও বিশেষ উপকারী। বেশির ভাগ সময়ে ৮ থেকে ২০টা সেসন লাগে, প্রতিটি সেসনে একঘন্টা সময় লাগে। এই থেরাপি কাযর্করী হতে গেলে আপনাকে ছমাসে অন্তত দশটি সেসন নিতে হবে।

 

কাউন্সেলিং বা সাপোর্টিভ সাইকোথেরাপি
এতে সরাসরি আপনার লক্ষণগুলি কমাবে না, কিন্তু এতে উপকার হতে পারে যদিঃ

  • কথা বলে আপনি আপনার মনের ভাব লাঘব করতে চান
  • কোনো ব্যাপারে গভীরে গিয়ে চিন্তা করতে চান

দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কোনো সহায়তা চান

ফ্যামিলি ওয়ার্ক

ফ্যামিলি ওয়ার্কের উদ্দেশ্য নয় স্কিৎসোফ্রেনিয়ার কারণ অনুসন্ধান করা। এর উদ্দেশ্য আপনাদের সহায়তা করা যাতে আপনি এবং আপনার পরিবারের অন্য সদস্যেরা এই পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে পারেন। 
স্কিৎসোফ্রেনিয়া সম্বন্ধে তথ্য জানানো যেতে পারে বা স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রুগীকে কীভাবে সাপোর্ট করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা করা যেতে পারে। এছাড়া রোগের উপসর্গের জন্য কোনো অসুবিধা হলে সে ব্যাপারেও আলোচনা করা যেতে পারে। মাস ছয়েকের মধ্যে খান দশেক এরকম মিটিং প্রয়োজন।

কগ্নিটিভ রেমেডিয়েশন এই নিয়ে রিসার্চ চলছে এবং এখনো বিশেষ প্রচলন হয় নি। এটি 'মেন্টাল জিম'এর মত স্মৃতিশক্তি এবং মনঃ সংযোগ বাড়ানোর জন্য উপকারী হবে বলে মনে করা হয়।


কমিউনিটি মেন্টাল হেলথ টিমের সাপোর্ট

  • আপনার কমিউনিটি মেন্টাল হেলথ টিমের একজন সদস্যের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা দরকার। কমিউনিটি সাকায়াট্রিক নার্স আপনাকে সময় দিতে পারবে কথা বলবার জন্য এবং আপনার ঔষধ সংক্রান্ত কোনো অসুবিধা হলে তার ব্যবস্থা নিতে পারবে।
  • অকুপেশনাল থেরাপিস্ট আপনাকে সাহায্য করতে পারেঃ
    • আপনি কোন ধরনের কাজ করতে পারেন
    • যে কাজ আপনি ভালো করতে পারছেন না, সে কাজ কী করলে   ভালো করা যায়
    • আপনি কীভাবে নিজের কাজ নিজে করবেন বা অন্যের সঙ্গে  কথাবার্তা বলবেন
    • আপনি কী ভাবে কর্মজীবনে ফেরৎ যাবেন
  • পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যেও সাহায্যের ব্যবস্থা আছে। অসুখ এবং এর চিকিৎসা সম্বন্ধে আপনি জানতে পারবেন এবং দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সে ব্যাপারেও সাহায্য পেতে পারেন। কমিউনিটি মেন্টাল হেলথ টিমের একজন সদস্যের সঙ্গে কিছুদিন নিয়মিত মিটিং করার দরকার হতে পারে।
  • সাকায়াট্রিস্ট আপনার ঔষধের দিকটা দেখবেন। ইনি আপনার চিকিৎসার ব্যাপারে সবরকম ভাবে দায়ী।
  • আপনার কেয়ার কো-অর্ডিনেটর নজর রাখবেন আপনি ঠিকমত পরিষেবা পাচ্ছেন কিনা।

 

চিকিৎসার মূল্যায়ন

  • ক্লোজাপিন ছাড়া (১৮ পৃষ্ঠা দেখুন) অন্য অ্যান্টিসাইকোটিকের  (সে টিপিকাল বা এটিপিকাল যাই হোক না কেন) উপকারিতার ব্যাপারে বিশেষ হেরফের আছে বলে এখনো কোনো তথ্য আমাদের হাতে নেই।
  • আগে থেকে বলা সম্ভব নয় যে আপনার ক্ষেত্রে কোন অ্যান্টিসাইকোটিক বেশি ভালো কাজ করবে।
  • যে কোনো অ্যান্টিসাইকোটিক ব্যবহার করে আপনাকে দেখতে হবে যে তাতে আপনার কাজ হচ্ছে কিনা। যদি না হয় বা অস্বস্তিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় তাহলে আপনার সাকায়াট্রিস্টের সঙ্গে কথা বলুন, তিনি অন্য অ্যান্টিসাইকোটিক ব্যবহার করতে চান কিনা।
  • সাধারণতঃ এটিপিকাল অ্যান্টিসাইকোটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম টিপিকাল অ্যান্টিসাইকোটিকের তুলনায়। তাই এটিপিকাল অ্যান্টিসাইকোটিক দিয়ে চিকিৎসা শুরু করলেই ভালো।
  • ক্লোজাপিন কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য অ্যান্টিসাইকোটিকের চেয়ে বেশি কাজ দেয়। কিন্তু এর কিছু ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে বলে অন্য চিকিৎসায় কাজ না হলে তবেই এটি ব্যবহার করা উচিৎ। আপনি যদি দুটি অ্যান্টিসাইকোটিক (তার মধ্যে একটি এটিপিকাল) ৬-৮ সপ্তাহ ব্যবহার করে বিশেষ উপকৃত না হন, তবে ক্লোজাপিন ব্যবহারের কথা ভাবতে পারেন।
  • আমরা জানি যে যাঁরা ঔষধ খাচ্ছেন তাঁদের সাহায্য করতে পারে কগ্নিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি। যাঁরা ঔষধ খাচ্ছেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে এতে কাজ হয় কি হয় না তা আমাদের জানা নেই।
  • অসুস্থতার প্রথমদিকে কেবল কগ্নিটিভ থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায় কিনা সে ব্যাপারে রিসার্চ চলছে।
  • আপনি এব্যাপারে আরো তথ্য চাইলে নাইস পুস্তিকা পড়ে দেখুন (ইংরাজী পুস্তিকা দ্রষ্টব্য)
  • আপনি আপনার চিকিৎসায় সন্তুষ্ট না হলে আপনি দ্বিতীয় কোনো সাকায়াট্রিস্টের অভিমত জানতে পারেন।

সামাজিক জীবন

ডে সেন্টার

আপনার হয়ত কাজ নেই অথবা আপনি কাজে ফিরে যেতে পারছেন না। তাহলেও রোজ বেরনো উচিৎ এবং কিছু কাজ করা উচিৎ। অনেকে রোজ ডে হাসপাতাল, ডে সেন্টার বা মেন্টাল হেলথ কমিউনিটি সেন্টারে যান। এখানে অনেক কিছু করা যায়। শিক্ষা, শরীরচর্চা, ছবি আঁকা বা মৃৎশিল্পের মত হাতের কাজ, কিংবা কর্মক্ষেত্রে ফেরত যাবার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এখানে পাওয়া যেতে পারে। আপনি আবার কাজকর্ম করতে পারেন এবং অন্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন।

কর্ম প্রজেক্ট
এই প্রজেক্টে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় আপনার কর্মক্ষমতা বিকাশের জন্য। নিকটস্থ সংস্থার সঙ্গে চাকরীর জন্য যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া এবং আপনি কর্মজীবনে ফেরত গেলে সেখানে আপনাকে সাপোর্ট করা এদের কাজ।
আপনার অসুখ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে আপনার কর্মজীবনে পুনবাসনের জন্য  আপনার বিশেষ পরিষেবা প্রয়োজন। 

সাপোর্টেড আবাসন
এই ধরনের আবাসনে আপনি ফ্ল্যাটে থাকবেন এবং লোক থাকবে আপনাকে দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করতে। 

 

সিপিএ --কেয়ার প্রোগ্রাম আপ্রোচ (শুধুমাত্র ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)

এই প্রক্রিয়াতে নিশ্চিত করা হয় যাতে স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সঠিক কেয়ার এবং সাপোর্ট পান। এর অন্তর্ভুক্তঃ

  • আপনার কেয়ার কো-অরডিনেটর দেখবেন যাতে আপনি সঠিক পরিষেবা পান।
  • ৩-৬ মাস অন্তর অন্তর নিয়মিত মিটিং ডাকা হয়। এতে উপস্তিত থাকবেন আপনি, আপনার কেয়ার কো-অর্ডিনেটর, আপনার সাকায়াট্রিস্ট এবং আর যাঁরা আপনাকে কেয়ার বা সাপোর্ট দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে আপনার পরিবারের সদস্যেরা থাকতে পারেন।
  • মিটিং থেকে নির্ধারণ করা হয় আপনাকে কীভাবে পরিষেবা দেওয়া হবে। প্ল্যানটি লিখিতভাবে আপনাকে জানানো হয়। আপনি সম্মত হলে এতে সাক্ষর করবেন, সম্মত না হলে এটি পরিবর্তন করা হবে।
  • আপনি আবার অসুস্থ হলে বা কোনো বিপদে পড়লে কি করবেন সে ব্যাপারেও প্ল্যান করা হয়।
  • যাঁরা আপনার কেয়ারার তাঁদের কী প্রয়োজন সেই বিষয়টিও ভেবে দেখার জন্য এই মিটিং।

 

স্বনির্ভরতা

প্রথম যে সব উপসর্গ দেখা দেয়, সেগুলি চিনতে শিখুন। যেমনঃ

  • খাবারে অনীহা, অনিদ্রা বা উৎকন্ঠা
  • অন্যেরা যদি মনে করেন যে আপনি রান্নাবান্না করছেন না, ঘর পরিষ্কার করছেন না বা পরিষ্কার কাপড়চোপড় পরছেন না।
  • সামান্য কিছু উপসর্গ দেখা দিল যথা-অল্প অল্প সন্দেহ বা ভয় মনে জাগছে, কিংবা মনঃসংযোগ করতে পারছেন না কিংবা অল্পস্বল্প আওয়াজ শুনছেন।
  • নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকছেন না।
  • যাতে আপনার অসুবিধা বাড়ে এমন কাজ করবেন না; যেমন
    • যে পরিস্থিতিতে আপনার স্ট্রেস হয়(বেশি লোকের সঙ্গে কথা বললে)
    • মদ বা অন্য নেশাকারক দ্রব্য সেবন করা
    • টাকাপয়সা নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করা
    • বন্ধু, প্রতিবেশি বা আত্মীয়দের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করা
  • রিল্যাক্স করবার পদ্ধতি শিখুন।
  • আপনি উপভোগ করেন এমন কিছু কাজ নিয়মিত করবার চেষ্টা করুন।
  • আওয়াজ নিয়ন্ত্রণে রাখবার চেষ্টা করুন
    • অন্যদের সঙ্গে সময় কাটান
    • নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
    • নিজে স্টিরিও শুনুন (টিভি বা রেডিও শোনা যায়, কিন্তু তাতে আপনার পরিবারের অন্য সদস্যেরা বিরক্ত হতে পারেন)
    • মনকে বোঝান যে এই শব্দ আপনার ক্ষতি করতে পারে না
    • মনকে বোঝান যে এই শব্দগুলির এমন কোনো ক্ষমতা নেই যে আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনাকে দিয়ে কিছু করিয়ে নেবে
    • একটি গ্রুপে যোগদান করুন যে গ্রুপে অন্যদের আপনার মত অভিজ্ঞতা হয়েছে (ইংরাজী পুস্তিকার শেষে দেখুন)
  • যদি রোগের লক্ষণ ফিরে আসে আপনার বিশ্বস্ত কাউকে একথা জানান।
    স্কিৎসোফ্রেনিয়া এবং তার চিকিৎসা সম্বন্ধে জানুন
    • আপনার নার্স, সাকায়াট্রিস্ট বা মেন্টাল হেলথ ওয়ার্কারের সঙ্গে কথা বলুন
    • আপনার অসুখ এবং তার চিকিৎসা সম্বন্ধে লিখিত তথ্য চান
    • আপনার ঔষধে কাজ না হলে অন্য ঔষধ প্রয়োগ করতে অনুরোধ জানান
  • নিজের শরীরের যত্ন নিন
    • সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন, যথেষ্ট ফল ও শাকসব্জি খাওয়া দরকার
    • সিগারেট খাবেন না, এতে আপনার হার্ট, ফুসফুস, রক্ত সঞ্চালন এবং পেটের ক্ষতি হয়।
    • নিয়মিত এক্সেরসাইজ করুন। যদি রোজ কুড়ি মিনিট ধরে হাঁটেন তাহলেও সেটা ভাল। যদি কঠোর পরিশ্রম করেন (সপ্তাহে তিনদিন কুড়ি মিনিট ধরে আপনার পালস রেট দ্বিগুণ হলে)তাহলে আপনার মনে প্রফুল্ল ভাব আসবে।
  • যদি স্কিৎসোফ্রেনিয়া সম্বন্ধে কোনো বিকৃত তথ্য পরিবেশিত হয় সংবাদমাধ্যম, রেডিও বা টিভিতে, তাহলে হতাশ হবেন না। কিছু করুন। চিঠি লিখুন, ইমেল করুন, তাঁদের ফোন করে বলুন যে তাঁরা ভুল করছেন। এতে কাজ হয়।

 

পরিবারের সদস্যদের জানবার জন্য

আপনি হয়ত বুঝতে পারছেন না আপনার ছেলে বা মেয়ে, স্বামী বা স্ত্রী, ভাই বা বোন অথবা পার্টনারের কী হয়েছে।
অনেক সময় কেউই বুঝতে পারেন না কি হচ্ছে।

 

 আপনি কি পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন?

আপনার প্রিয়জন হয়ত অস্বাভাবিক ব্যবহার করছেন বা আগের চাইতে অন্য ধরনের ব্যবহার করছেন। হয়ত তাঁরা খুব দূরের মানুষ হয়ে গেছেন।তাঁরা হয়ত পরিচিত লোকের সঙ্গ বর্জন করে চলছেন এবং আগের তুলনায় তাঁদের কর্মোদ্যম কমে গেছে। তাঁদের মনে বদ্ধমূল ভ্রান্ত ধারণা থাকলে তাঁরা সে ব্যাপারে কথা বলতে  পারেন অথবা চুপও করে থাকতে পারেন।যদি তাঁরা আওয়াজ শোনেন, তাহলে আপনি দেখবেন যে ত্তাঁরা হঠাৎ অন্য দিকে ফিরে যেন অনুপস্থিত কোনো ব্যক্তির কথা শুনছেন।তাঁদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা হয় উত্তর দেবেন না, নয়ত তাঁদের উত্তর আপনার বোধগম্য হবে না।তাঁদের ঘুমের পরিবর্তন হতে পারে, তাঁরা হয়ত সারারাত জেগে সারাদিন ঘুমোবেন।


আপনার মনে হতে পারে যে এই ব্যবহার বিদ্রোহের প্রতীক। অনেক সময় এই পরিবর্তন এত আস্তে আস্তে হয় যে স্মৃতিচারণ করার সময় আপনাদের মনে পড়বে কবে এই অসুবিধা শুরু হয়েছিল।টিনেজে এই ধরনের পরিবর্তন হলে সেটা অসুস্থতার লক্ষণ বলে বোঝা আরো কঠিন। এই সময়ে এমনিতেই পরিবর্তন হয়।

 

এটা কী আমার দোষ?
আপনি হয়ত নিজেকে দোষারোপ করছেন এবং ভাবছেন 'এটা কী আমার দোষ?' আপনার মনে হতে পারে পরিবারের আরো কোনো সদস্য আক্রান্ত হতে পারেন কিনা, ভবিষ্যতে কী হবে, কোথায় কিভাবে সুচিকিৎসা পাওয়া যাবে।

 

আমি কী মেন্টাল হেলথ টিমের কারো সঙ্গে কথা বলতে পারি?
গোপনীয়তার জন্য আগে পরিবারের সদস্যদের তাঁদের আত্মীয়ের সম্বন্ধে কথাবার্তার সময় যোগদান করতে দেওয়া হত না। এখন আর সেটা হওয়া উচিৎ  নয়।যদি স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবারের মধ্যে থাকেন বা পরিবারের অন্য সদস্যেরা তাঁর দেখাষোনা করেন, তবে তাঁদের এমন তথ্য জানা উচিৎ যাঁতে তাঁরা তাঁদের আত্মীয়ের সুষ্ঠুভাবে দেখভাল করতে পারেন। এ ব্যাপারে কিছু অসুবিধা থাকলেও, আত্মীয় কেমন আছেন একথা   মেন্টাল হেলথ টিমকে জানাবেন তো পরিবারের সদস্যেরাই।
     
পরিবারের অন্য সদস্যদের যতদূর সম্ভব তথ্য এবং সাহায্য পাওয়া দরকার।তাঁদের দুশ্চিন্তা এবং দুর্ভাবনার কথা শুনতে হবে মেন্টাল হেলথ টিমকে।ঔষধ এবং তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে জানানো দরকার এবং জানানো দরকার ছোটোখাটো তথ্য যা রোগের উপশম করতে সাহায্য করবে।

দ্য প্রিন্সেস রয়্যাল ট্রাস্ট ফর কেয়ারারস এবং দ্য রয়্যাল কলেজ অব সাকায়াট্রিস্টস পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি চেকলিস্ট তৈরী করেছেন। এর থেকে কী কী জানা দরকার তা জানতে পারবেন পরিবারের সদস্যেরা। এছাড়াও অনেক সংস্থা আছে যারা স্কিৎসোফ্রেনিয়ার সম্পর্কে তথ্য এবং সাহায্য প্রদান করে থাকে।

 

আমরা কী করতে পারি?
পরিবারের সদস্যদের কিছু জানা দরকার। স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হলে স্ট্রেস সহ্য করা কঠিন। তর্কাতর্কি কম করে মাথা ঠান্ডা রাখা দরকার। তবে একথা অবশ্য বলা সহজ, কিন্তু করা কঠিন।

 

জোর করে হাসপাতালে ভর্তি করা
কেউ স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হলে তিনি হয়ত বুঝতে পারবেন না যে তিনি অসুস্থ। যখন বিশেষ প্রয়োজন তখন হয়ত তাঁরা চিকিৎসা করাতে চাইবেন না।কাউকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে হাসপাতালে ভর্তি করতে গেলে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে মেন্টাল হেলথ অ্যাক্ট এবং অন্য দেশে একইরকমের কিছু আইনগত প্রক্রিয়ায় ভর্তি করা যায়।যদি কারো অসুখের মূল্যায়ন বা চিকিৎসা প্রয়োজন হয় এবং রা সম্মত না হন তাহলে এই আইন ব্যবহার করা যায় যদিঃ

  • তাঁদের স্বাস্থ্যের বিশেষ ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী
  • তাঁরা নিজেদের ক্ষতি করে ফেলতে পারেন
  • তাঁরা অন্যদের ক্ষতি করে ফেলতে পারেন।

এই আইন ব্যবহার করতে গেলে তিনজন প্রফেশনালের অভিমত প্রয়োজন। তাঁরা হলেনঃ

  • একজন ডাক্তার (সাধারণত; জিপি, যিনি পেশেন্টকে চেনেন)
  • একজন মানসিক স্বাস্থ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার (সাধারণতঃ সাকায়াট্রিস্ট)
  • একজন অ্যাপ্রুভড সোস্যাল ওয়ার্কার তিনিও মানসিক স্বাস্থ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। 


আপনাকে এই আইনের বলে যদি হাসপাতালে রাখা হয়, তবে আপনি এর বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন।হাসপাতালে আপনাকে বলে দেবে কী করে এটা করা যায়। ইংরাজী পুস্তিকার শেষে বিস্তারিত তালিকা দেওয়া আছে আরো জানবার জন্য।

 

কিছু ভুল ধারনা

 

স্কিৎসোফ্রেনিয়া মানে দ্বিখন্ডিত চরিত্র না?
না। অনেকে মনে করেন যে স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি কখনো সম্পূর্ণ সুস্থ আবার কখনো অন্য এক মানুষ হয়ে পড়েন।

এই কথাটির কোনো অর্থ নেই। আমরা দুভাবে স্কিৎসোফ্রেনিয়া শব্দটির অপব্যবহার করি। এতে আমরা কখনো বোঝাই 'কোন বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া অথবা বিপরীতধর্মী দুটি প্রতিক্রিয়া'। এটি মানুষের স্বভাব। আরো পরিষ্কার ভাবে বোঝাতে গেলে বলা চলে দোনামোনা করা। ঠিক একই ভাবে আমরা বোঝাতে পারি যে কেউ আলাদা আলাদা পরিস্থিতিতে আলাদা আলাদা রকমের ব্যবহার করে। এটাও মানুষের স্বভাব।

স্কিৎসোফ্রেনিয়া হলে মানুষ ভয়াবহ হয়ে ওঠে, তাই না?
স্কিৎসোফ্রেনিয়ায়  আক্রান্ত ব্যক্তি বেশিরভাগ সময়েই রাগারাগি বা মারামারি করেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এইরকম মারামারির মূলে আছে মদ বা নেশাকারক পদার্থ। যাঁরা স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত নন, মদ বা নেশাকারক দ্রব্য সেবন করলে তাঁরাও একই রকম ভাবে মারামারি করেন।
স্কিৎসোফ্রেনিয়ায়  আক্রান্ত হলে মারামারির সম্ভাবনা বাড়ে।কিন্তু ড্রাগ বা মদ সেবন করলে মারামারির সম্ভাবনা বাড়ে বহুগুণ। কাজেই সমাজের প্রেক্ষাপটে প্রথমোক্ত অপরাধ ধর্তব্যের মধ্যেই আসে না। যদি স্কিৎসোফ্রেনিয়া সংক্রান্ত সব মারামারি বন্ধ হয়ে যেত তাহলে সমাজে শতকরা ১ ভাগ অপরাধ কমত। স্কিৎসোফ্রেনিয়ায়  আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যের হাতে আহত হবার সম্ভাবনা বেশি, নিজে আঘাত হানবার চেয়ে।

স্কিৎসোফ্রেনিয়া কখনো ভালো হয় না
স্কিৎসোফ্রেনিয়ায়  আক্রান্ত পাঁচজনের একজন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন (পরিণতি অধ্যায় দেখুন)।

কোনো ব্যক্তি যদি শারীরিক এবং মানসিক ভাবে অসুস্থ হন, তবে তার দেখাশুনা করা খুব ক্লান্তিদায়ক কাজ। আপনি বিপযর্স্ত বোধ করলে, সাহায্য নিন।

Read more to receive further information regarding a career in psychiatry