অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট (মানসিক অবসাদের ওষুধ)

Antidepressants

Below is a Bengali translation of our information resource on antidepressants. You can also view our other Bengali translations.

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট কী?

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট হলো এমন ওষুধ যা মানসিক অবসাদ, উদ্বেগজনিত ব্যাধি এবং অন্যান্য কয়েকটি রোগ উপশম করতে সাহায্য করে। এগুলো প্রথম ১৯৫০-এর দশকে তৈরি করা হয়েছিল এবং সেই সময় থেকে নিয়মিত ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এগুলোর পাঁচটি প্রধান বিভাগ আছে :

  • এসএসআরআই (সিলেক্টিভ সেরোটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটর)
  • এসএনআরআই (সেরোটোনিন অ্যান্ড নরঅ্যাড্রেনালিন রিআপটেক ইনহিবিটর)
  • এনএএসএসএ (নরঅ্যাড্রিনালিন অ্যান্ড স্পেসিফিক সেরোটোনার্জিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট)
  • ট্রাইসাইক্লিক
  • এমএওআই (মোনোঅ্যামিন অক্সিডেজ ইনহিবিটর)।

অন্যান্য কয়েক ধরনের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট আছে, যেগুলো আজকাল কম ব্যবহার করা হয় :

  • টেট্রাসাইক্লিক
  • এসএআরআই (সেরোটোনিন অ্যান্টাগনিস্ট অ্যান্ড রিআপটেক ইনহিবিটর)
  • এনডিআরআই (নোরেপিনেফ্রিন-ডোপামিন রিআপটেক ইনহিবিটর)।

মানসিক অবসাদের লক্ষণগুলোর চিকিৎসার জন্য কীভাবে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহার করা হয়, এই রিসোর্সটি তার ওপর আলোকপাত করে। তবে, অন্যান্য রোগের জন্য যারা অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণ করছেন, এই রিসোর্সের অনেক তথ্য তাদের জন্য সহায়ক হবে।

কীভাবে নিরাপদে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খাওয়া বন্ধ করবেন সে সম্পর্কে তথ্যের জন্য আমাদের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বন্ধ করার রিসোর্সটি দেখুন।

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট কীভাবে কাজ করে?

অন্যান্য অনেক ধরনের ওষুধ ও চিকিৎসার মতোই আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না যে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট কীভাবে কাজ করে। আমরা কেবল এটাই জানি যে এগুলো আমাদের মস্তিষ্কের কিছু রাসায়নিকের কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে। এগুলোকে নিউরোট্রান্সমিটার বলে, যা মস্তিষ্ক একটি কোষ থেকে অন্যটিতে সংকেত প্রেরণ করে। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত নিউরোট্রান্সমিটারগুলো হলো সেরোটোনিন ও নরঅ্যাড্রিনালিন।

তবে, গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট মস্তিষ্কে একাধিকভাবে কাজ করে যাতে সাধারণ রাসায়নিক বিক্রিয়ার বাইরেও আরও অনেক কিছু হয়। এই গবেষণা থেকে জানা যায় যে এগুলো :

  • শরীর কীভাবে চাপের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায় তা প্রভাবিত করে
  • আমাদের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর করে
  • মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি বন্ধ করে, এমনকি সারাতেও পারে।

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট কীসের জন্য ব্যবহৃত হয়?

লঘু মানসিক অবসাদের জন্য সাধারণত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট দেওয়া উচিত নয়। তবে, মাঝারি থেকে তীব্র মানসিক অবসাদজনিত রোগাক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদেরকে এগুলো সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এমনটা তখনই হয় যখন মানসিক অবসাদ কারও জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে ফেলে এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এককভাবে অথবা সাইকোথেরাপিসহ ব্যবহার করা যেতে পারে।

শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে সাধারণত এগুলো ব্যবহার করা উচিত নয়, যদি না তাদের মানসিক অবসাদ :

  • অন্যান্য চিকিৎসায় ভালো না হয়
  • অথবা খুবই তীব্র হয়।

অন্যান্য কিছু রোগের জন্যও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট দেওয়া যেতে পারে, যার মধ্যে আছে :

আপনার ডাক্তার আপনাকে জানাবেন যে তিনি কেন আপনাকে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খাওয়ার সম্ভাব্য সুবিধা ও ঝুঁকিগুলোও জানাবেন।

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট কতটা ভালো কাজ করে?

গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাঝারি ও তীব্র মানসিক অবসাদের লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু এই ওষুধগুলো সেবনের অভিজ্ঞতা একেক মানুষের জন্য একেকরকম।

কিছু মানুষ সময়ের সাথে সাথে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে, সাধারণত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহারের পরে মানুষ তাদের রোগের লক্ষণ ও জীবনযাত্রার মানে উন্নতি দেখতে পান। বিশেষ করে যখন তাদের মানসিক অবসাদ অনেক তীব্র হয়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট তাদের মানসিক অবসাদের লক্ষণগুলো দূর করে, তবে এর চ্যালেঞ্জিং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোও সহ্য করতে হয়। অন্য অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট কাজই করে না।

যদি ডাক্তার আপনাকে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ দেন, তাহলে খাওয়া শুরু করার দুই সপ্তাহ পর তিনি আপনার অবস্থা বোঝার জন্য একটি পর্যালোচনা করতে পারেন :

  • আপনি কেমন বোধ করছেন
  • আপনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না
  • এবং আপনাকে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে কি না।

মানসিক অবসাদ ঘটাতে পারে এমন বাহ্যিক কারণগুলোকে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট দূর করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি কর্মক্ষেত্রে অনেক চাপের মধ্যে থাকেন অথবা শোকার্ত থাকেন, তাহলে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এসব সমস্যা দূর করতে পারবে না। তবে, এগুলো মানসিক অবসাদের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং এই বাহ্যিক কারণগুলো মোকাবিলা করা সহজ করে তুলতে পারে। এ কারণেই এটিকে প্রায়ই সাইকোথেরাপির পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়।

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের কি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?

সব ওষুধেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহার শুরু করতে সম্মত হওয়ার আগে আপনার ডাক্তার অবশ্যই আপনার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। আপনার অতীত বা বর্তমান যে-কোনো রোগের বিষয়ে আপনার ডাক্তারকে অবশ্যই জানাবেন। তিনি আপনার জন্য যে ধরনের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সুপারিশ করবেন, তার ওপর এটি প্রভাব ফেলতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সেবনের কারণে হতে পারে এমন কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিচে দেওয়া হলো। আপনি যে ওষুধ খান তার সাথে থাকা লিফলেটে এগুলোর পূর্ণ বিবরণ থাকবে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তালিকাটি উদ্বেগজনক মনে হলেও বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এগুলো একেবারে কম হবে। শরীর ওষুধে অভ্যস্ত হয়ে গেলে সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এগুলো চলে যায়।

এসএসআরআই এবং এসএনআরআই

  • উত্তেজিত, কাঁপুনি বা উদ্বিগ্ন বোধ করা। এই কারণে মানুষ মাঝে মাঝে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খাওয়া বন্ধ করে দেয়, বিশেষ করে তাদেরকে যদি এটি সম্পর্কে সতর্ক না করা হয়। তবে, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট শুরু করার কয়েক সপ্তাহ পরে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাধারণত কমে যায়।
  • অসুস্থ বোধ করা বা অসুস্থ হয়ে পড়া
  • বদহজম বা পেট ব্যথা
  • ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া
  • মাথা ঘোরা
  • দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা
  • মুখের ভেতর শুকিয়ে যাওয়া
  • ঘামানো
  • ভালো ঘুম না হওয়া (অনিদ্রা), অথবা অনেক ঘুম পাওয়া
  • মাথা ব্যথা
  • যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া
  • যৌন মিলন বা হস্তমৈথুনের সময় তৃপ্তি না পাওয়া
  • পুরুষদের ক্ষেত্রে লিঙ্গের উত্থান না হওয়া অথবা হলেও ধরে রাখতে না পারা (ইরেক্টাইল ডিসফাংশন)।

এসএসআরআই বন্ধ করার পর খুব কম মানুষেরই স্থায়ী যৌন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। এই লক্ষণগুলো বর্ণনা করার জন্য কিছু মানুষ 'পোস্ট এসএসআরআই সেক্সুয়াল ডিসফাংশন' (পিএসএসডি) সংজ্ঞাটি ব্যবহার করেছেন। এসব মানুষের জীবনে পিএসএসডির উল্লেখযোগ্য ও যন্ত্রণাদায়ক প্রভাব পড়তে পারে।

কেন এটি ঘটে এবং এটি কতজন মানুষের হয় তা বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। যারা ক্রমাগত যৌন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হচ্ছেন তাদের জন্য উপযুক্ত ও সময়োপযোগী সহায়তা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

এনএএসএসএ

এনএএসএসএর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো এসএসআরআই-এর মতোই। এগুলোর ক্ষেত্রে আপনি তন্দ্রাচ্ছন্ন বোধ করতে পারেন এবং আপনার ওজন বাড়তে পারে, কিন্তু এগুলোতে যৌন সমস্যা কম হয়। 

ট্রাইসাইক্লিক

এগুলোর কারণে হতে পারে :

  • মুখের ভেতর শুকিয়ে যাওয়া
  • দৃষ্টিশক্তি সামান্য ঝাপসা হয়ে যাওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • প্রস্রাবের সমস্যা
  • তন্দ্রাচ্ছন্নতা
  • মাথা ঘোরা
  • ওজন বৃদ্ধি
  • অতিরিক্ত ঘাম হওয়া (বিশেষ করে রাতে)
  • হৃদস্পন্দনের সমস্যা, যেমন বুক ধড়ফড় করা বা দ্রুত হৃদস্পন্দন (ট্যাকিকার্ডিয়া)।

এসএসআরআই/এসএনআরআই-এর মতো এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সাধারণত লঘু হয় এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চলে যায়।

এমএওআই

এমএওআই এমন এক শ্রেণীর অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট যা সহজে খেতে বলা হয় না। এগুলো শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞদের দ্বারা ব্যবহার করা হয়। এর প্রধান কারণ হলো যারা এগুলো খাবেন তাদেরকে কঠোর ডায়েট অনুসরণ করতে হয়, যেখানে টাইরামিন (এক জাতীয় অ্যামিনো অ্যাসিড) সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলতে হয়। যদি এই ডায়েট অনুসরণ না করা হয়, তাহলে বিপজ্জনক মাত্রায় উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এমএওআই খেলে সাধারণত সমস্যা হয় না। এগুলো এমন কিছু পরিস্থিতিতে কার্যকর হতে পারে যেখানে অন্যান্য অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট কাজ করে না বা অপ্রীতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। 

যদি আপনি কোনো ধরনের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহার করে থাকেন এবং কয়েক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় বা সেগুলো অসহনীয় হয়ে ওঠে, তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। আপনার অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খাওয়া শুরু করার কথা আপনার বন্ধুবান্ধব বা পরিবারকে জানালে ভালো হয় । যদি আপনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তাহলে তাঁরা আপনাকে সহায়তা করতে পারবেন।

আপনি যে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণ করছেন, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ সম্পূর্ণ তথ্যের জন্য অনুগ্রহ করে ইলেকট্রনিক মেডিসিনস কম্পেন্ডিয়াম (ইএমসি)দেখুন। পেজের ওপরের সার্চ বক্সে ওষুধের নাম টাইপ করুন। ওষুধ দেওয়ার সময় আপনাকে এই তথ্যের একটি কাগজের কপিও দেওয়া হবে। যদি আপনি কপিটি না পান, তাহলে আপনার ফার্মাসিস্টকে সেটি দিতে বলুন। 

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং আত্মঘাতী চিন্তাভাবনা

মানসিক অবসাদ আত্মঘাতী প্রবণতা তৈরি করতে পারে। কিছু মানুষ অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খাওয়া শুরু করার পর তাদের মধ্যে আত্মঘাতী চিন্তাভাবনা বেড়ে যায়। শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে এটি হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এই কারণে, তাদেরকে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট দেওয়া হলে আত্মঘাতী চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদেরকে প্রেসক্রিপশন প্রদানকারী ডাক্তার বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীর নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

যদি আপনার আত্মঘাতী চিন্তা বা অনুভূতি হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে আপনার ডাক্তারকে জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আপনাকে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খাওয়া বন্ধ করার পরামর্শ দিতে পারেন।

যদি আপনার মনে হয় যে আপনি নিজের ক্ষতি করতে পারেন, তাহলে ৯৯৯ নম্বরে কল করুন অথবা আপনার নিকটতম দুর্ঘটনা ও জরুরি পরিষেবা বিভাগে যান।

কোনো জরুরি অবস্থা না থাকা সত্ত্বেও সাহায্যের প্রয়োজন হলে এনএইচএস ১১১-এ কল করুন

গাড়ি চালানো বা যন্ত্রপাতি চালানোর বিষয়ে কী বলা হয়েছে?

কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টে ঘুম ঘুম ভাব হয় এবং আপনার প্রতিক্রিয়া ধীর করে দেয়, তাই গাড়ি বা যন্ত্রপাতি চালানোর সময় এটি খাওয়া যাবে না। নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন এবং ওষুধের লিফলেটটি পড়বেন।

যদি আপনার রোগ বা ওষুধ আপনার গাড়ি চালানোর ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই ড্রাইভার অ্যান্ড ভেহিকেল লাইসেন্সিং এজেন্সিকে (ডিভিএলএ) জানাতে হবে।

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বন্ধ করার অনুভূতি কেমন?

কিছু মানুষের জন্য অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বন্ধ করা কঠিন হয়, আবার কিছু মানুষের জন্য তা তুলনামূলক সহজ হয়।

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট কখনোই তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা উচিত নয়। আমরা অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বন্ধ করা নিয়ে একটি পৃথক তথ্যমূলক রিসোর্স তৈরি করেছি, যা এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। এটি কীভাবে ধীরে ধীরে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করতে হয় সে সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করে।

সাধারণত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বন্ধ করার কয়েক দিনের মধ্যে উইথড্রয়াল সিম্পটম (মাদকদ্রব্য বা ওষুধের ব্যবহার বন্ধ করার কারণে উদ্ভূত উপসর্গ) দেখা দেয়, যার মধ্যে আছে :

  • মাথা ব্যথা
  • হালকা মাথা ঘোরা
  • বমি বমি ভাব
  • ঘুমাতে অসুবিধা
  • বাস্তবিক বা ভীতিকর স্বপ্ন
  • বৈদ্যুতিক শক লাগার মতো অনুভূতি (যা 'জ্যাপ' নামেও পরিচিত)
  • উদ্বেগ ও বিরক্তিসহ মেজাজের দ্রুত পরিবর্তন।

যদি কয়েক সপ্তাহ বা মাস পরে মানসিক অবসাদ ফিরে আসে, তাহলে সম্ভবত এটি উইথড্রয়াল সিম্পটম নয়, বরং মূল রোগের ফিরে আসার কারণে হয়ে থাকে।

আমাদের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বন্ধ করার তথ্যমূলক রিসোর্সে আপনি এ সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন।

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট কি আসক্তিকর অথবা আপনি কি এগুলোর ওপর নির্ভর হয়ে পড়তে পারেন?

কিছু মানুষ অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়ার পর অপ্রীতিকর উইথড্রয়াল সিম্পটম অনুভব করেন। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহ ধরে ধীরে ধীরে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের ডোজ কমালে উইথড্রয়াল সিম্পটম কমানো যায়। যদিও কিছু মানুষের আবারও ওষুধ গ্রহণ শুরু করা লাগতে পারে এবং তাদের ডোজ আরও ধীরে ধীরে কমাতে হবে।

চাইলেই এগুলো খাওয়া বন্ধ করতে না পারলে আপনার মনে হতে পারে যে আপনি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের প্রতি আসক্ত। এটি কিন্তু পুরোপুরি অর্থে ‘আসক্তি’ নয়।

সাধারণত আসক্তি বলতে বোঝায় যে আপনি :

  • মাদকদ্রব্য সেবনের জন্য তাগিদ বা আকাঙ্ক্ষা অনুভব করেন
  • মাদক সেবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান
  • যখন মাদক সেবন করেন তখন আনন্দ বা ‘পুলকিত’ অনুভব করেন।

অ্যালকোহল, নিকোটিন ও বেনজোডায়াজিপাইনের মতো মাদকের প্রতি আসক্তি হতে পারে।

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সেবন বন্ধ করা কঠিন, তবে এটিকে আদতে শারীরিক নির্ভরতা বলা যায়।

‘শারীরিক নির্ভরতা‘ শব্দটিকে আসক্তির সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়। শারীরিক নির্ভরতা মানে আপনার শরীর কোনো মাদক বা ওষুধের উপস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।

এটি সহনীয়তা এবং উইথড্রয়াল প্রভাব তৈরি করে, কারণ শরীরের ওপর এগুলোর প্রভাব ফুরিয়ে গেলে শরীর এগুলোর অভাব অনুভব করে। নির্ভরতা তৈরির জন্য কোনো ওষুধের ‘মত্ততা’ সৃষ্টি করার প্রয়োজন নেই।

আমি কোন ধরনের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খেতে পারব?

এখানে আপনি সাধারণভাবে ব্যবহৃত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের তালিকা, যুক্তরাজ্যে তাদের বাণিজ্যিক নাম এবং এগুলো কোন 'গ্রুপে' আছে তা খুঁজে পাবেন।

ওষুধ

বাণিজ্যিক নাম

গ্রুপ

অ্যামিট্রিপটাইলিন ট্রিপটিজল ট্রাইসাইক্লিক
অ্যাগোমেলাটিন ভালডক্সান অন্যান্য*
ব্যুপ্রোপিয়ন জাইবান এনডিআরআই
সিটালোপ্রাম সিপ্রামিল এসএসআরআই
ক্লোমিপ্রামিন অ্যানাফ্রানিল ট্রাইসাইক্লিক
দেসিপ্রামিন নরপ্রামিন ট্রাইসাইক্লিক
ডেসভেনলাফ্যাক্সিন প্রিস্টিক এসএনআরআই
ডসুলেপিন প্রোথিয়াডেন ট্রাইসাইক্লিক
ডক্সেপিন সিনেকুয়ান ট্রাইসাইক্লিক
ডুলোক্সেটিন সিম্বাল্টা, ইয়েনট্রিভ এসএনআরআই
এসিটালোপ্রাম সিপ্রালেক্স এসএসআরআই
ফ্লুওক্সেটিন প্রোজ্যাক এসএসআরআই
ফ্লুভোক্সামিন ফ্যাভেরিন এসএসআরআই
ইমিপ্রামিন টোফ্রানিল ট্রাইসাইক্লিক
আইসোকারবক্সাজিড মারপ্লান এমএওআই
লোফপ্রামিন গামানিল ট্রাইসাইক্লিক
মিয়ানসেরিন টোলভন টেট্রাসাইক্লিক
মিলনাসিপ্রান ইক্সেল এবং সাভেলা এসএনআরআই
মিরটাজাপাইন জিসপিন এনএএসএসএ
মোক্লোবমাইড মানেরিক্স এমএওআই
নেফাজোডোন সেরজোন এসএআরআই
নর্ট্রি‌প্‌টাইলাইন অ্যালেগ্রন ট্রাইসাইক্লিক
প্যারোক্সেটিন সেরোক্স্যাট এসএসআরআই
ফেনেলজাইন নার্ডিল এমএওআই
রিবক্সেটিন এড্রোনাক্স এসএনআরআই
সার্ট্রা্লিন লাস্ট্রাল এসএসআরআই
ট্রানিলসাইপ্রোমিন পারনেট এমএওআই
ট্রাজোডোন মলিপ্যাক্সিন ট্রাইসাইক্লিক-সম্পর্কিত
ট্রিমিপ্রামিন সুরমন্টিল ট্রাইসাইক্লিক
ভেনলাফ্যাক্সিন এফেক্সর এসএনআরআই
ভিলাজোডোন ভিব্রিড এসএসআরআই
ভোর্টিওক্সেটিন ব্রিন্টেলিক্স এসএসআরআই

*এই অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সেরোটোনিন নিয়ন্ত্রণ করে, তবে প্রক্রিয়াটি প্রথাগত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের তুলনায় ভিন্ন। এটি ঘুমের সাথে সম্পর্কিত হরমোন মেলাটোনিনকেও প্রভাবিত করে।

এটি সব অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়। মাঝে মাঝে বিশেষ অবস্থায় অন্যান্য ওষুধ ব্যবহৃত হয়।

গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কী করতে হবে?

গর্ভাবস্থার আগে, গর্ভাবস্থায় এবং তার পরে শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য অনেকেরই ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয়। বহু বছর ধরে কিছু ওষুধ গর্ভাবস্থার সময়ও ব্যবহার করা হয়। অন্যগুলো গর্ভাবস্থায় বিপজ্জনক বলে জানা গেছে (যেমন সোডিয়াম ভালপ্রোয়েট)।

গর্ভাবস্থায় বা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণ চালিয়ে যাওয়া, পরিবর্তন করা বা বন্ধ করা উচিত কি না সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়। সেক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করতে হয়, যার মধ্যে আছে :

  • আপনি যেসকল ওষুধ খাচ্ছেন
  • আপনার ব্যক্তিগত অসুস্থতার ইতিহাস
  • আপনি চিকিৎসার পর কতটুকু সেরে উঠলেন
  • আপনার মতামত।

চিকিৎসা না নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাব্য ঝুঁকির সঙ্গে গর্ভাবস্থায় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টসহ যে-কোনো ওষুধ গ্রহণের ঝুঁকি ভারসাম্যপূর্ণভাবে বিবেচনা করা উচিত। আপনার জিপি বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে সবিস্তারে আলোচনা করতে হবে। 

গর্ভাবস্থায় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খেয়েছেন এমন হাজারো নারীকে নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। এই গবেষণাগুলো ব্যাখ্যা করা সব সময় সহজ নয়, কারণ অনেকগুলো জিনিস শিশুদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। আপনার অসুস্থতার বিভিন্ন ওষুধ সম্পর্কে বর্তমান গবেষণা কী বলে তা বুঝতে আপনার জিপি বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সাহায্য করতে পারেন।

অনেক নারী গর্ভাবস্থায় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খান। এসএসআরআই (সিলেক্টিভ সেরোটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটর)-এর মতো সাধারণভাবে ব্যবহৃত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং গর্ভাবস্থায় তাদের ব্যবহার সম্পর্কে অনেক তথ্য আছে। ভর্টিওক্সেটিনের মতো নতুন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সম্পর্কে অনেক কম তথ্য পাওয়া যায়। আপনি গর্ভাবস্থায় ওষুধের সর্বোত্তম ব্যবহার ওয়েবসাইটে নানা ধরনের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সম্পর্কে তথ্য পাবেন।

যদি আপনি এখনও গর্ভবতী না হয়ে থাকেন

যদি সম্ভব হয়, গর্ভধারণের আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। তবে, অনেক গর্ভধারণ অপরিকল্পিত হয় এবং আপনি গর্ভবতী হওয়ার পরই আপনাকে ওষুধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।

যদি আপনি ইতিমধ্যেই গর্ভবতী হয়ে থাকেন

যদি ইতিমধ্যেই গর্ভবতী হয়ে থাকেন, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করুন। ডাক্তার না বলা পর্যন্ত হুট করে ওষুধ বন্ধ করবেন না। হঠাৎ করে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বন্ধ করে দিলে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা পুনরায় দেখা দিতে পারে। এটি অপ্রীতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে। ওষুধ বন্ধ করা নিরাপদ কি না সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার পূর্বের অসুস্থতার তীব্রতা বিবেচনা করতে হবে। গর্ভাবস্থায় ওষুধ বন্ধ করার পর অনেক নারীর আবারও এই রোগ দেখা দেয়।

আরও তথ্যের জন্য আমাদের গর্ভাবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য লিফলেটটি দেখুন।

আমাকে কতদিন ধরে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খেতে হবে?

আপনি কতদিন ধরে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণ করবেন তা নির্ভর করে কেন আপনাকে সেগুলো দেওয়া হয়েছিল এবং আপনাকে সেগুলো আগে খেতে হয়েছিল কি না তার ওপর।

যদি আপনি প্রথমবার বা দ্বিতীয়বার অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খেয়ে থাকেন, তাহলে সেরে ওঠার পর কমপক্ষে ছয় মাস ধরে এগুলো খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে। যদি আপনি তার আগে ওষুধ বন্ধ করে দেন, তাহলে মানসিক অবসাদের উপসর্গগুলো ফিরে আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যদি এর আগেও অনেকবার মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে আরও বেশি সময় ধরে সেগুলো খেতে হবে। তবে, কখন ও কীভাবে এগুলো বন্ধ করবেন সে সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।

আপনার অসুস্থ হওয়ার পেছনে কোন ব্যাপারটি ভূমিকা রেখেছে তা নিয়েও ভাবতে হবে। মানসিক অবসাদের মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হঠাৎ করেই দেখা দেয় এবং এর স্পষ্ট কোনো কারণ থাকে না। তবে, আপনার জীবনে এমন অনেক কঠিন পরিস্থিতি আসতে পারে যা আপনার অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন আর্থিক চাপ, একাকীত্ব বা চাকরি হারানো। অনেক সময় চাপ এড়ানো অসম্ভব হয়ে যায়। তবে, ভবিষ্যতে আবারও অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে আপনি কিছু কাজ করতে পারেন।

যদি মানসিক অবসাদ ফিরে আসে?

মানসিক অবসাদ ফিরে আসতেই পারে, এমনকি আপনি ভালো থাকার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও এটি হতে পারে। এমনটা হলে আপনাকে যা করতে হতে পারে :

কিছু মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খেতে হয়। যদি আপনি আশা নিয়ে থাকেন যে আপনি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খাওয়া বন্ধ করতে পারবেন, তাহলে আপনাকে হতাশ হতে হবে। মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, ভবিষ্যতে আপনার আবারও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খাওয়া বন্ধ করা সম্ভব হতে পারে। তার মানে এই নয় যে আপনি 'ব্যর্থ' হয়েছেন।

আমি যদি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট না খাই তাহলে কী হবে?

এটি বলা কঠিন। এটি নির্ভর করে কেন ওষুধটি দেওয়া হয়েছিল, আপনার মানসিক অবসাদ কতটা তীব্র এবং আপনি কতদিন ধরে এটিতে ভুগছেন তার ওপর। মাঝে মাঝে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই কিংবা টকিং থেরাপির মতো অন্যান্য চিকিৎসার মাধ্যমে মানসিক অবসাদ ভালো হয়ে যায়।

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট আপনার জন্য টকিং থেরাপির মতো অন্যান্য চিকিৎসা নেওয়া সহজতর করে তুলতে পারে। এটি টকিং থেরাপিকে আরও কার্যকর করে।

ডাক্তার আপনাকে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খেতে বলার আগে আপনার সাথে তা নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি নিশ্চিত করবেন আপনি যাতে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খাওয়া ও না খাওয়ার সুবিধা ও ঝুঁকিগুলো ভালোভাবে বোঝেন।

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সম্পর্কে আমার আর কী কী জানা দরকার?

আপনি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট নিয়ে থাকলে আপনার জ্ঞাতার্থে জন্য এখানে কিছু সহায়ক বিষয় আছে :

  • অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খেলে আপনার যদি সমস্যা হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। তিনি আপনাকে এমন ধরনের ওষুধ বা ডোজ দেবেন যা আপনার জন্য কার্যকর হবে এবং যেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আপনি যদি একাধিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খেয়ে থাকেন, তাহলে তিনি বিকল্প কিছু ওষুধ দিতে পারেন।
  • যদি আপনার কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তাহলে হতাশ হবেন না। এগুলো অপ্রীতিকর এবং এর ফলে মানুষ মাঝে মাঝে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খাওয়া বন্ধ করে দিতেই পারেন। তবে, বেশিরভাগ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চলে যায়। যদি পারেন, ওষুধ বন্ধ করার আগে এই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার চেষ্টা করুন। তবে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অসহনীয় হলে অথবা আপনি আত্মঘাতী অনুভব করলে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
  • ডোজ বাদ দেবেন না, কারণ এর ফলে আপনার উইথড্রয়াল সিম্পটম দেখা দিতে পারে। যদি একটি ডোজ বাদ পড়েও যায়, আপনার পরবর্তী ডোজটি যথারীতি খান। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় ওষুধ খেয়ে বাদ পড়া ডোজ পূরণ করতে যাবেন না।
  • বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট কাজ শুরু করতে ১-২ সপ্তাহ সময় নেয়। কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্রভাব অনুভব করতে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যায়। তবুও যদি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খেয়ে উপকার পান, বন্ধ করার আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সেগুলো খেতে থাকুন। হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
  • মদ্যপান নিয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। বেশিরভাগ অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট অ্যালকোহলের সাথে প্রতিক্রিয়া করে না। ওষুধ খাওয়ার সময় মদ্যপান করলে কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট আপনাকে অসুস্থ বা তন্দ্রাচ্ছন্ন করতে পারে, অথবা অ্যালকোহলের প্রভাব বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • যদি মনে হয় যে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট আপনার শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
  • অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট নির্দিষ্ট কিছু খাবার ও ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আঙুর অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সার্ট্রালিনের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। আপনার অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট কোনো খাবার বা ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া করে কি না তা ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টকে জিজ্ঞাসা করুন এবং আপনার প্রেসক্রিপশনে লেখা তথ্য সাবধানে পড়ুন। যদি আপনি কোনো নতুন ওষুধ শুরু করেন, তাহলে এটি আপনার অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের সাথে প্রতিক্রিয়া করে কি না নিশ্চিত হতে ওষুধের সাথে থাকা তথ্য সাবধানে পড়ুন।

মানসিক অবসাদের জন্য আর কোন কোন চিকিৎসা আছে?

টকিং থেরাপি (মানসিক থেরাপি)

মানসিক অবসাদে সহায়তা করে এমন বেশ কিছু টকিং থেরাপি আছে। এগুলো সবার আগে সুপারিশ করা হয়, অথবা অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের সাথে চালাতে বলা হয়।

  • কাউন্সেলিং – লঘু মানসিক অবসাদের ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং কার্যকর হতে পারে এবং সমস্যা সমাধানের কৌশল বিকাশে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। জীবনের নানা সমস্যার কারণে মানসিক অবসাদ দেখা দিলে কাউন্সেলিং আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
  • কগনিটিভ বিহেভিয়েরাল থেরাপি (সিবিটি বা জ্ঞানীয় আচরণগত থেরাপি) – সিবিটি আপনার চিন্তাভাবনা, কর্ম ও অনুভূতির মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে বের করতে শেখার মাধ্যমে আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি আপনার অতীতের ওপর কম এবং বর্তমান ঘটনাবলীর ওপর বেশি মনোযোগ দেয়, যা অন্যান্য মনস্তাত্ত্বিক থেরাপির ক্ষেত্রে হয় না।

এগুলো এবং অন্যান্য সাইকোথেরাপি সম্পর্কে জানার জন্য দেখুন :

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা

উদ্ভিদ দিয়ে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা হয়, তবে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয় না।

কিছু আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা মানসিক অবসাদে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে একটির নাম হাইপেরিকাম, এবং এটি সেইন্ট জন'স ওয়ার্ট নামক একটি ভেষজ থেকে তৈরি হয়। এটি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা, তাই এটি সম্পর্কে গবেষণা কম হয়েছে এবং এটি বিক্রি করা নিয়েও বেশি নিয়মকানুন নেই। কোথা থেকে এটি কিনছেন তার ওপর ভিত্তি করে এর দাম পরিবর্তিত হতে পারে।

এসএসআরআই অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং অন্যান্য অনেক ওষুধের সাথে খেলে সেইন্ট জন’স ওয়ার্ট বিপজ্জনক হতে পারে। এটি গর্ভনিরোধক বড়ির মতো অন্যান্য ওষুধের কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। যদি আপনি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নিতে চান, তাহলে সবার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

সামগ্রিক সুস্থতা

আপনাকে নিজের সামগ্রিক সুস্থতার কথা ভাবতে হবে। নিজেকে ভালো বোধ করানোর জন্য আপনি অনেক কিছু করতে পারেন যাতে করে পুনরায় মানসিক অবসাদগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে :

  • কথা বলার মতো কাউকে খুঁজে বের করা
  • শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা
  • মদ্যপান কমানো এবং মাদক সেবন না করা
  • ভালো খাবার খাওয়া যেমন বেশি করে মাছ, ফল ও সবজি খাওয়া
  • নিজেকে শান্ত করার জন্য সেলফ-হেল্প কৌশল ব্যবহার করা
  • মানসিক অবসাদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন যে-কোনো ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা
  • পিয়ার সাপোর্ট (নিজেদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অন্যদের সাহায্য করা) – আপনার মতো একই রকম সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের সাথে দেখা করলে তা সহায়ক হতে পারে। আপনার জন্য উপযুক্ত পিয়ার সাপোর্ট গ্রুপ সম্পর্কে জানতে আপনার জিপির সাথে কথা বলুন।

সেলফ-হেল্প নিয়ে পরামর্শ পেতে আমাদের মানসিক অবসাদ বিষয়ক লিফলেটটি দেখুন।

সোশ্যাল প্রেসক্রাইবিং

সোশ্যাল প্রেসক্রাইবিং মানুষকে স্থানীয় কমিউনিটি সার্ভিস ও গ্রুপগুলোর সাথে যুক্ত হতে সাহায্য করে। এটি তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি বাগান করতে পছন্দ করেন, তাহলে সোশ্যাল প্রেসক্রাইবিংয়ের মাধ্যমে আপনার কাছাকাছি কোনো সাপ্তাহিক গার্ডেনিং গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। আপনি অন্যদের সাথে দেখা করতে পারবেন এবং একসাথে পছন্দের কাজগুলো করে সময় কাটাতে পারবেন।

আমাদের সোশ্যাল প্রেসক্রাইবিং রিসোর্সে এ সম্পর্কিত আরও তথ্য পাওয়া যাবে।

আলো

কিছু মানুষ মনে করে যে তাদের মেজাজ ঋতু দ্বারা প্রভাবিত হয়। একে বলা হয় মৌসুমী প্রভাবজনিত ব্যাধি (এসএডি)। যদি আপনি প্রতি শীতে মানসিক অবসাদে ভোগেন কিন্তু দিন লম্বা হতে শুরু করলে ঠিক হয়ে যান, তাহলে একটি লাইট বাক্স আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে। এটি উজ্জ্বল আলোর একটি উৎস যা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবহার করতে হয় এবং শীতকালে আলোর অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে। যদি মনে হয় যে আপনি এসএডিতে ভুগছেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

আমি কোথায় আরও তথ্য পাব?

যদি আপনার অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে এখানে তথ্যের অন্যান্য উৎসগুলো দেখুন, অথবা আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

কৃতজ্ঞতা

রয়াল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টস-এর পাবলিক এনগেজমেন্ট এডিটোরিয়াল বোর্ড (পিইইবি) তথ্যগুলো সংকলন করেছে। এটি বিদ্যমান সর্বোত্তম তথ্যের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে।

প্রধান লেখক : প্রফেসর ওয়েন্ডি বার্ন

বিশেষজ্ঞ পর্যালোচনা : রয়াল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টস-এর সাইকোফার্মাকোলজি কমিটি

অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞগণ : ফিয়োনা রাহে এবং ভিক্টোরিয়া ব্রিডগ্ল্যান্ড

অনুরোধক্রমে পূর্ণাঙ্গ তথ্যসূত্র পাওয়া যাবে।

© রয়াল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টস (Royal College of Psychiatrists)

This translation was produced by CLEAR Global (Apr 2025)

Read more to receive further information regarding a career in psychiatry