কগনিটিভ বিহেভিয়েরাল থেরাপি (সিবিটি)
Cognitive behavioural therapy (CBT)
Below is a Bengali translation of our information resource on cognitive behavioural therapy (CBT). You can also view our other Bengali translations.
দাবি পরিত্যাগী
কগনিটিভ বিহেভিয়েরাল থেরাপি (সিবিটি) সম্পর্কে জানতে চান এমন যেকোনো ব্যক্তির জন্য এই তথ্য প্রযোজ্য। সিবিটি কিভাবে করা হয়, এটি কেন করা হয়, এর প্রভাব ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী কী এবং এর বিকল্প আর কী কী চিকিৎসাপদ্ধতি রয়েছে তা নিয়ে এখানে আলোচনা করা হবে।
সিবিটি (CBT) কী?
সিবিটি হলো এক ধরনের টকিং থেরাপি। টকিং থেরাপিগুলো সাইকোথেরাপি নামেও পরিচিত। সাইকোথেরাপি ও মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসাবিষয়ক তথ্যসংবলিত আমাদের পেইজটি থেকে আপনি এ সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন।
বিভিন্ন দৈনন্দিন পরিস্থিতিতে আপনি কিভাবে চিন্তাভাবনা করবেন এবং আপনার ওপর নানা বিষয়ের কেমন প্রতিক্রিয়া হবে সেই বিষয়ক উপকারী কিছু পদ্ধতি শিখতে সিবিটি আপনাকে সাহায্য করবে। চিন্তাভাবনা ও কাজকর্মের ধরনে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে অনেক সময় মানসিক অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব হয়।
অন্যান্য কিছু টকিং থেরাপির চেয়ে সিবিটি একটু আলাদা, কারণ এতে অতীতের অভিজ্ঞতার পরিবর্তে বর্তমানের প্রতিবন্ধকতাগুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়। এই চিকিৎসার লক্ষ্য হচ্ছে আপনাকে নিজের চিন্তা, কাজ ও অনুভূতির মধ্যকার সম্পর্ক খুঁজে বের করার উপায় শেখানোর মাধ্যমে আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতি করা।
সিবিটি চলাকালে আপনার থেরাপিস্টের সহায়তায় আপনি সমস্যা সমাধানের নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করবেন এবং যাকিছু পরিবর্তন করতে চান সেসব বিষয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন। সিবিটি ফলপ্রসূ হলে তখন নিজের জীবন যে নিজের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে তা উপলব্ধি করা সহজ হয়।
সিবিটি থেকে কারা উপকৃত হতে পারেন?
অনেক মানসিক রোগের ক্ষেত্রেই সিবিটি ব্যবহারে সুফল পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- মানসিক অবসাদ
- উদ্বেগ, আতঙ্ক ও অমূলক ভয় – অ্যাগোরাফোবিয়া (এমন কোনো পরিস্থিতিতে আটকা পড়ার ভয় যেখান থেকে পালানোর কিংবা যেখানে সাহায্য পাওয়ার কোনো উপায় থাকবে না), সামাজিক উদ্বেগ (সামাজিক পরিস্থিতিকে ভয় করা) ও স্বাস্থ্যজনিত উদ্বেগও (অসুস্থ থাকার কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয়) এসবের অন্তর্ভুক্ত
- খাদ্যগ্রহণে অস্বাভাবিকতা
- অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি)
- পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি)
- বাইপোলার ডিজঅর্ডার এবং
- সাইকোসিস (স্কিৎজোফ্রেনিয়াসহ)।
অন্যান্য সমস্যার ক্ষেত্রেও সিবিটি কাজে আসতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ভাল ঘুম না হওয়া
- মানসিক চাপ
- ক্রোধ
- আত্মবিশ্বাসের অভাব
- ব্যথা ও অত্যধিক ক্লান্তির মতো শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা।
সিবিটির মাধ্যমে যেকোনো বয়সের মানুষই উপকৃত হতে পারে, এমনকি ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও।
সিবিটি চলাকালে সেটির পাশাপাশি মানসিক সুস্থতার জন্য ওষুধ খাওয়ার দরকার হলে তাও করা যায়। তবে তা আপনার সমস্যা, ডাক্তারের মতামত ও আপনার পছন্দের ওপর নির্ভর করবে।
মদ্যপান, মাদক কিংবা ঔষধে আসক্তিসংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকলে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সিবিটি শুরু করার আগে সেই সমস্যাগুলোর সমাধান করার ব্যবস্থা করা উচিত। এর কারণ হচ্ছে, অত্যধিক মদ্যপান, ঔষধ সেবন বা মাদক গ্রহণ করা হলে সেক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার বেশি কার্যকর উপায় শেখা ও মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
ডিমেনশিয়াসহ স্মৃতিশক্তির তীব্র সমস্যায় ভুক্তভোগীদের ক্ষেত্রে সিবিটিতে ফললাভ হতে দেখা যায়নি। সিবিটির গুরুত্বপূ্র্ণ একটি অংশ হচ্ছে নতুন দক্ষতা অর্জন করা, কিন্তু পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার নতুন কোনো উপায় মনে রাখা কিংবা চর্চা করাই যদি সম্ভব না হয় তাহলে সেসব দক্ষতা অর্জন করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
সিবিটি কিভাবে করা হয়?
সিবিটির ‘C’ দিয়ে বোঝায় ‘কগনিটিভ’ অর্থাৎ ‘জ্ঞানীয়’ (আপনি যা ভাববেন) – মনে কখন নেতিবাচক চিন্তাভাবনা চলছে তা ধরতে পারার পদ্ধতি আপনি সিবিটির মাধ্যমে শিখতে পারবেন। এই চিকিৎসায় নেতিবাচক এবং নিরর্থক বা অহিতকর ভাবনাকে আপনি চ্যালেঞ্জ করতে থাকবেন। এসব ভাবনার উদাহরণ হল:
- ‘আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না’ কিংবা
- ‘সবকিছু গুলিয়ে যাবে’।
আপনি এগুলোর পরিবর্তে মনে আরও কার্যকর ও বাস্তব ভাবনার উদ্রেক করার চেষ্টা করবেন। যেমন:
- ‘একথা যে সত্য তার প্রমাণ কী?’
- ‘এই বিষয় নিয়ে অন্য আর কোন আঙ্গিকে ভাবা যেতে পারে?’ কিংবা
- ‘আমার অবস্থায় কোনো বন্ধু পড়লে তাকে আমি কী উপদেশ দিতাম?’
সিবিটির ‘B’ দিয়ে বোঝায় ‘বিহেভিয়ার’ অর্থাৎ ‘আচরণ’ (আপনি যা করবেন) – আপনি যা-ই করেন এবং তা যেভাবে করেন তা-ই হল আপনার আচরণ। যেসব বিষয় আপনি এড়িয়ে চলেছেন কিংবা যেসব বিষয় নিয়ে আপনার মনে ভয় রয়েছে সেসব সমস্যার সমাধান সিবিটির মাধ্যমে করা সম্ভব হতে পারে। সিবিটি চলাকালে আপনার প্রতিদিনকার কাজকর্ম আপনি ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারবেন এবং যেসব কাজ করতে ভয় পান সেগুলো করে দেখার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারবেন। নিজের লক্ষ্য ও কাজকর্ম সম্পর্কে লিখে রাখলে, কাজ করে তাতে সফলতা প্রাপ্তির ফলে আপনার মনে তৃপ্তি আসবে এবং আপনার পক্ষে নিজের অগ্রগতির হিসাব রাখাও সুবিধা হবে।
সিবিটির ‘T’ দিয়ে বোঝায় ‘থেরাপি’ অর্থাৎ ‘চিকিৎসা’ (আপনি যা শিখবেন) – সিবিটির মাধ্যমে আপনি এমন সব নতুন দক্ষতা শিখতে পারবেন যেগুলো পরবর্তীতে ‘বাড়ির কাজ’ হিসাবে করা যাবে। সিবিটি শেষে আপনি এসবের চর্চা অব্যাহত রাখতে পারবেন, যার ফলে ভবিষ্যতে ভাল থাকার উপায় আপনার হাতের নাগালেই থাকবে।
সিবিটির বিস্তারিত বিবরণ
বড় বা জটিল কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়ে বিহ্বল হয়ে পড়ার পরিবর্তে সেটিকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে বোঝার ক্ষেত্রে সিবিটি সহায়ক হতে পারে। এর ফলে অংশগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক কেমন এবং আপনার ওপর সেগুলোর কী কী প্রভাব পড়ছে তা বোঝা সহজ হয়। এই অংশগুলো হল:
- কোনো পরিস্থিতি – যেমন কোনো কর্মকাণ্ড কিংবা আপনার সাথে ঘটা এমন কোনো ঘটনা যা মেনে নেওয়া আপনার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়
এ থেকে আসতে পারে:
- ভাবনা
- আবেগ
- দৈহিক অনুভূতি
- কাজ
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা যেভাবে চিন্তাভাবনা করি এবং আমাদের মধ্যে বিভিন্ন পরিস্থিতির যে প্রতিক্রিয়া হয় তার ফলে আমাদের আচরণ ও আবেগ কিভাবে প্রভাবিত হতে পারে তা এই রেখাচিত্রটিতে দেখা যাচ্ছে:
কোনো পরিস্থিতিতে আপনার চিন্তার কেমন প্রভাব আপনার আবেগ, অনুভূতি ও কাজকর্মের ওপর পড়তে পারে তার একটি উদাহরণ এখানে দেওয়া হল।
উদাহরণ:
পরিস্থিতি
আপনার দিনটি বেশ খারাপ কাটছে এবং আপনি বিরক্ত হয়ে গেছেন, তাই আপনি ঠিক করলেন কিছু কেনাকাটা করতে যাবেন। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আপনি দেখলেন আপনার পরিচিত কেউ পাশ দিয়েই হেঁটে গেল অথচ আপনার দিকে ভ্রুক্ষেপও করল না। এই পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া হিসাবে আপনার মনে হিতকর ভাবনারও উদয় হতে পারে, আবার অহিতকর ভাবনারও। আপনার প্রতিক্রিয়া ঠিক কী হবে তার ওপর নির্ভর করে নিচের ব্যাপারগুলো ঘটতে পারে:
অহিতকর | হিতকর | |
ভাবনা: | সে আমাকে পাত্তা দেয় নি - আমাকে সে পছন্দ করে না | তাকে দেখে ব্যস্ত মনে হল - সে কোনো সমস্যায় পড়ে নি তো? |
আবেগজনিত অনুভূতি: | মনখারাপ ও বিষণ্ণতা, নিজেকে উপেক্ষিত মনে হওয়া | পরিচিত ব্যক্তিটিকে নিয়ে ভাবনা, ইতিবাচক চিন্তা |
দৈহিক অনুভূতি: | পেটব্যথা, অবসাদ, খারাপ লাগা | কিছুই নয় - স্বস্তিকর অবস্থা |
কাজ: | বাড়ি চলে যাওয়া এবং সেই ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলা | সেই ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে তার খোঁজখবর নেওয়া |
এই উদাহরণটিতে দেখা গেল একই পরিস্থিতির দুটি খুবই ভিন্ন পরিণতি রয়েছে।
আমাদের যখন মনখারাপ থাকে কিংবা যখন আমরা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগি তখন আমাদের পক্ষে সবকিছুকে উগ্র ও অহিতকর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
আপনার ভাবনা, অনুভূতি ও কাজ কিভাবে অঙ্গাঙ্গি জড়িত তা সিবিটির মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন। এর ফলে আপনি সহজেই:
- নিরর্থক বা অহিতকর চিন্তাভাবনা করার অভ্যাস (অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া) ত্যাগ করতে,
- নিরর্থক বা অহিতকর কাজকর্ম (কোনো পরিস্থিতিকে এড়িয়ে চলা) পরিত্যাগ করতে,
- উপকারী বা হিতকর চিন্তাভাবনা (ইতিবাচক দিক খুঁজে বের করার চেষ্টা) করার অভ্যাস গড়ে তুলতে এবং
- হিতকর কাজকর্ম করতে (ওপরের উদাহরণে যা ছিল একজন বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করা) শিখতে পারবেন।
আমার সিবিটি কত দিন চলবে?
সিবিটি শেষ হতে ৬ সপ্তাহ থেকে শুরু করে ৬ মাস পর্যন্ত লাগতে পারে। আপনার সমস্যাটি ঠিক কী এবং আপনার ওপর সিবিটির কেমন প্রভাব পড়ছে তার ওপর নির্ভর করবে আপনার সিবিটি কত দিন চলবে।
একজন থেরাপিস্টের সাথে সচরাচর ৬ থেকে ২০টি সেশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সিবিটি সম্পন্ন হয়। সেশনগুলো সাপ্তাহিকও হতে পারে, আবার পাক্ষিকও হতে পারে। প্রতিটি সেশনের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে হয়ে থাকে।
সিবিটি-তে কী ঘটে?
প্রথম ২–৪টি সেশনব্যাপী আপনার থেরাপিস্ট আগে নিশ্চিত হয়ে নেবেন যে, এই ধরনের চিকিৎসা আসলেই আপনার কাজে আসবে কিনা এবং এই পদ্ধতিতে আপনার কোনোরকম অস্বস্তি বোধ হচ্ছে কিনা। সিবিটি-তে অতীতের অভিজ্ঞতার ওপর গুরুত্বারোপ করা না হলেও আপনার থেরাপিস্টকে কিন্তু প্রয়োজনের খাতিরে আপনার জীবন ও অতীত সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করতেই হবে। মাঝে মাঝে অতীতের কথা আলোচনা মাধ্যমেই কেবল বোঝা যায় বর্তমানে আপনার ওপর সেটির কেমন প্রভাব পড়ছে।
প্রতিটি সেশনের শুরুতেই আপনি আপনার থেরাপিস্টের সাথে কথা বলে ঠিক করে নেবেন সেই সেশনে কী নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগের সেশনের পর থেকে আপনার সময় কেমন কেটেছে, আপনার বাড়ির কাজ কেমন হয়েছে ইত্যাদি কিংবা যেকোনো সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা বলা একটি সেশনের কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
সিবিটি শেষ হওয়ার পর আপনি নিজের জন্য ‘ভাল থাকা’র একটি পরিকল্পনা তৈরি করবেন। আপনি যে যে দক্ষতা অর্জন করেছেন সেগুলো সেখানে উল্লেখ করবেন এবং ভবিষ্যতে আপনি দক্ষতাগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা কিভাবে করবেন আপনার পরিকল্পনায় আপনি সেটিও অন্তর্ভুক্ত করবেন। আর সিবিটি শেষ হওয়ার পরও আপনাকে এসব দক্ষতার অনুশীলন অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেওয়া হবে।
সিবিটি চলাকালে আমাকে কী কী কাজ করতে হবে?
সিবিটি চলাকালীন সময় আপনার থেরাপিস্টের সহযোগিতায় আপনি ওপরের উদাহরণের মতো করে সব সমস্যাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করবেন। আপনার ভাবনা, অনুভূতি ও আচরণকে লক্ষ করে আপনারা একসাথে ভেবে বের করার চেষ্টা করবেন:
- সেগুলো অবাস্তব কিংবা অহিতকর কিনা এবং
- সেগুলো একটির ওপর অন্যটির কী প্রভাব পড়ছে এবং আপনার ওপর সেগুলোর কী কী প্রভাব পড়ছে।
চিকিৎসা চলাকালে আপনাকে কিছু প্রশ্নমালা কিংবা ওয়ার্কশিট পূরণ করতে দেওয়া হবে। আপনার থেরাপিস্ট আপনাকে ডায়েরি লিখতেও বলতে পারেন। প্রতিদিন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আপনি কিভাবে চিন্তা করেন, আপনার মনে কী কী অনুভূতি হয় এবং আপনি কী কী কাজ করেন তা এর মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হবে। আর তারপর অপ্রীতিকর ভাবনা ও অহিতকর আচরণ পরিবর্তনের উপায় খুঁজে বের করতে আপনার থেরাপিস্ট আপনাকে সহায়তা করবেন।
আমাকে কী কী বাড়ির কাজ করতে হতে পারে?
পরিবর্তনগুলো কাজে প্রয়োগ করলে তখন সিবিটি-র কার্যকারিতা বেড়ে যায়। আপনার থেরাপিস্ট আপনাকে নিয়মিত ‘বাড়ির কাজ’ করার পরামর্শ দেবেন। দৈনন্দিন জীবনে নতুন নতুন দক্ষতার অনুশীলন করা এসব কাজের অন্তর্ভুক্ত হবে। সেক্ষেত্রে আপনি যে যে বিষয়ের চর্চা করতে পারবেন তা হল:
- নিজের ভাবনাকে প্রশ্ন করা – এসব ভাবনার মধ্যে রয়েছে আত্মসমালোচনা, ইতিবাচক বিষয় উপেক্ষা করা, ব্যক্তিগতভাবে অপমানিত বোধ করা ইত্যাদি। আপনি নিরর্থক বা অহিতকর চিন্তাভাবনার অভ্যাসকে বদলাতে এবং আরও হিতকর ও বাস্তব চিন্তাভাবনা করতে শিখবেন।
- কাজকর্ম পুনর্বিবেচনা করা – আপনি যা করতে যাচ্ছেন তাতে আপাতত লাভ হলেও পরবর্তীতে যে তার ফলে আপনাকে আরও বেশি ভুগতে হবে তা বুঝতে শেখা। এমন কাজের উদাহরণ হল: কোনো পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা, কোনোকিছু বার বার যাচাই করে দেখা কিংবা আশ্বস্ত হওয়ার জন্য কারো কাছ থেকে বার বার নিশ্চয়তা চাওয়া। এমন কাজ করার পরিবর্তে বরং আপনি তুলনামূলক আরও হিতকর কাজকর্ম করার অভ্যাস গড়তে শিখবেন।
- বিশ্বাসকে খতিয়ে দেখা – আপনি যা যা বিশ্বাস করেন তা যাচাই করে দেখা সেগুলো আসলেই সত্য কিনা। যেমন খুব ক্লান্ত ও মানসিক অবসাদগ্রস্ত অবস্থায় হয়তো আপনার মনে হতে পারে প্রতিদিন ২০ মিনিট করে হাঁটতে গেলে আপনার আরও বেশি খারাপ লাগবে। সেক্ষেত্রে আপনি পরীক্ষামূলকভাবে এক সপ্তাহ হেঁটে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট ফলাফল লিখে রেখে তারপর দেখতে পারেন আপনার আন্দাজ সত্যিই ঠিক ছিল কিনা।
ঋণশোধের মতো জীবনের বাস্তব সমস্যার ক্ষেত্রেও আপনি সমস্যা সমাধানের দক্ষতা প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।
এই ‘বাড়ির কাজ’ কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সিবিটি-র উদ্দেশ্য হল আপনাকে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া যার পর থেকে আপনি ‘নিজে নিজেই সব করবেন’ এবং নিজের মতো করে আপনার সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবেন।
সিবিটি কতটা কার্যকর?
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার এক্সিলেন্সের (NICE) মতে বেশ কয়েকটি সমস্যার ক্ষেত্রে সিবিটি-ই সবচেয়ে ভাল চিকিৎসা।
- উদ্বেগ ও মানসিক অবসাদ - যেসব রোগের ক্ষেত্রে সমস্যার মূলে থাকে উদ্বেগ (যেমন জেনারালাইজড অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার কিংবা প্যানিক ডিজঅডর্ডার) অথবা মানসিক অবসাদ সেসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসাপদ্ধতিগুলোর একটি হচ্ছে সিবিটি।
- ফোবিয়া ও ওসিডি - ফোবিয়া এবং ওসিডির সবচেয়ে কার্যকর মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা হল সিবিটি।
দেখা গেছে সিবিটি শুরু করার পর চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারীদের চার ভাগের প্রায় এক ভাগই চিকিৎসা বাদ দিয়ে দেয়। সেবাগ্রহীতা যদি মানসিক অবসাদগ্রস্ততায় ভোগে কিংবা থেরাপিস্টের উপস্থিতিতে সামনাসামনি যদি সিবিটি করা না হয় তাহলে শুরুর দিকে এভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
ওষুধের তুলনায় সিবিটি কতটা কম/বেশি কার্যকর?
বিভিন্ন প্রকারের মানসিক অবসাদের চিকিৎসায় সিবিটি-তে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের মতোই কাজ হয়। উদ্বেগের চিকিৎসায় এতে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের চেয়ে সামান্য বেশি ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে। ওষুধের চেয়ে সিবিটির প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়, আর এটি প্রয়োগ করা হলে রোগীর পক্ষে ভবিষ্যতেও ভাল থাকা সহজ হয়ে যায়।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা তীব্র হলে সেক্ষেত্রে শুধু ওষুধ কিংবা শুধু সিবিটি-র পরিবর্তে ওষুধের পাশাপাশি সিবিটি করা হলে তাতে বেশি উপকার হতে পারে।
সিবিটি কিভাবে করা হয়?
প্রশিক্ষিত থেরাপিস্টরা সিবিটি করে থাকেন। বিভিন্ন উপায়ে সিবিটি পাওয়া সম্ভব:
সামনাসামনি করা সিবিটি
এটি একক সেশনেও করা যেতে পারে, আবার দলগতভাবেও করা যেতে পারে। সামনাসামনি করা সিবিটিকে সাধারণত এই চিকিৎসাপদ্ধতিটির সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসাবে গণ্য করা হয়।
ডিজিটাল সিবিটি (অনলাইন বা ‘ই-সিবিটি’)
কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট কিংবা স্মার্টফোন দিয়ে ভিডিও কল কিংবা টাইপ করে চ্যাট করার মাধ্যমে এটি করা যেতে পারে। নিচের পরিস্থিতিগুলোতে ডিজিটাল সিবিটি কাজে আসে:
- সরাসরি সাক্ষাত করা সম্ভব না হলে, যেমন: শারীরিক অসুস্থতার জন্য
- আপনার ওপর যদি কাউকে দেখাশোনা করার এমন কোনো দায়িত্ব থাকে যার কারণে কোথাও একা যাওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব না হয়, কিংবা
- যেখানে সামনাসামনি সিবিটি করা হয় সেখানে যদি আপনার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না হয়।
ডিজিটাল সিবিটির কার্যকারিতাও সামনাসামনি করা সিবিটির সমান হতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে ব্যক্তিভেদে পার্থক্য দেখা যায় এবং কার্যকারিতার পরিমাণ সিবিটি গ্রহণকারী ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে।
সেলফ-হেল্প সিবিটি
সেলফ-হেল্প সিবিটি-র ক্ষেত্রে আপনাকে বই অথবা অনলাইন কোনো কর্মসূচি কিংবা অ্যাপের সহায়তা নিতে হবে। যেহেতু নিজে নিজে করবেন সেহেতু এক্ষেত্রে বাড়ির কাজ করা ও সিবিটির পুরো প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য আপনার মধ্যে অনুপ্রেরণা থাকতে হবে। সেলফ-হেল্প সিবিটি চলাকালীন পেশাদার কারো কাছ থেকে সহায়তা পেলে সেটি আরও ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। একে ‘গাইডেড সেলফ-হেল্প’ বলে এবং এটি ফোনে, ইমেইলে কিংবা অনলাইনে করা যায়।
সিবিটি পাওয়ার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে পরামর্শ পেতে হলে নিচের ‘আরও তথ্য’ নামক অংশটি দেখুন।
সিবিটি কী কী ধরনের হয়?
সিবিটি নির্দিষ্ট একটি চিকিৎসার নাম নয়, বরং এক এটি এক ধরনের টকিং থেরাপির নাম। আপনার ক্ষেত্রে ঠিক কোনটিতে সবচেয়ে ভাল কাজ হবে তা নির্ভর করবে আপনি কেমন মানুষ এবং আপনি কী কী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তার ওপর। যেমন কয়েকটি সিবিটি পদ্ধতিতে পুরনো অভ্যাস ত্যাগ করতে সহায়তা করা হয়। আবার অন্যান্য পদ্ধতিতে, সরাসরি চিন্তাকে বদলানোর পরিবর্তে বরং চিন্তার ফলে মনে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়াকে বদলানোর উপায় শেখানো হয়।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে এমন কয়েকটি সিবিটি পদ্ধতি এখানে দেওয়া হল:
সিবিটির ধরন | এই চিকিৎসায় কী কী করা হয়? | এতে কোন কোন বিষয়ে উপকার পাওয়া যায়? |
---|---|---|
কগনিটিভ থেরাপি | নিরর্থক বা অহিতকর ভাবনা ও বিশ্বাস সনাক্ত করা হয়। সব কর্মকাণ্ডের কথা কোথাও লিখে রাখা হয় এবং আরও ফলপ্রসূ ও বাস্তব উপায়ে চিন্তাভাবনা করা ও কোনোকিছুর প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখানোর চেষ্টা করা হয়। | বিভিন্ন রকমের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা (যেমন মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ) |
আচরণমূলক চিকিৎসা (যেমন পর্যায়ক্রমিক সংস্পর্শ) | এড়িয়ে চলা, বার বার পরীক্ষা করে দেখা, আশ্বস্ত হতে চাওয়া ইত্যাদির মতো নিরর্থক বা অহিতকর আচরণ বদলানো হয়। ধীরে ধীরে অতীতে এড়িয়ে-যাওয়া পরিস্থিতি, ভাবনা কিংবা স্মৃতির সম্মুখীন হওয়া হয়। | ফোবিয়া, উদ্বেগ, ওসিডি, পিটিএসডি |
বিহেভেরিয়াল অ্যাক্টিভেশন) | যেসব কাজ করে আনন্দ কিংবা সাফল্যের তৃপ্তি পাওয়া যায় সেসব করার মাধ্যমে আরও সক্রিয় ও জীবনযাপনের প্রতি আরও মনোযোগী হয়ে ওঠা হয়। ডায়েরি লেখা হয় এবং ইতিবাচক কর্মকাণ্ড করার পরিকল্পনা করে রাখা হয়। | মানসিক অবসাদ, নিস্তেজ ভাব |
সমস্যা সমাধানভিত্তিক চিকিৎসা | সমস্যা চিহ্নিত করা, তা সমাধানের কয়েকটি উপায় খুঁজে বের করা, তারপর একটি বেছে নিয়ে সেটি প্রয়োগ করে দেখা হয়। | বাস্তব জীবনের সমস্যা (যেমন চাকরি, টাকাপয়সা) |
প্রেষণামূলক সাক্ষাৎকার | কোনো একটি অভ্যাসের উপকারিতা ও অপকারিতাগুলো বিবেচনা করা হয়। পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। | মদ্যপান |
মননশীলতা | বর্তমানে নিজের মনে যেসব ভাবনা রয়েছে ও নিজের চারপাশে যে পরিবেশ রয়েছে সেসবের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখানো ছাড়াই মনোনিবেশ করা হয়। | পৌনঃপুনিক মানসিক অবসাদ, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ |
কম্প্যাশনেট মাইন্ড থেরাপি | নিজের ও অন্যদের প্রতি আরও বেশি সদয় হওয়া ও সমালোচনা কম করা হয়, যার ফলে মনে নিরাপত্তার অনুভূতি সৃষ্টি হয় ও তৃপ্তি আসে। | লজ্জা, রাগ, মানসিক অবসাদ, আত্মবিশ্বাসের অভাব, গুরুতর মানসিক আঘাত |
অ্যাকসেপটেন্স অ্যান্ড কমিটমেন্ট থেরাপি (ACT, উচ্চারণ: ‘অ্যাক্ট’) | অপ্রীতিকর ভাবনা ও অনুভূতি নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকা এবং তার ফলে বিমর্ষ হয়ে পড়ার পরিবর্তে সেগুলোর উপস্থিতিকে স্বীকার করে নেওয়া হয়। | শারীরিক অসুস্থতা, ব্যথা, উদ্বেগ, মানসিক অবসাদ |
ডায়ালেক্টিক্যাল বিহেভিওর থেরাপি (DBT) | জোরালো অনুভূতি ও মেজাজের আকস্মিক পরিবর্তনকে সামলানোর মাধ্যমে সম্পর্কজনিত সমস্যার সমাধান করা হয়। এতে মুখোমুখি সিবিটি-র সাথে গ্রুপ থেরাপির সমন্বয় করা হয়ে থাকে। | আবেগের অস্থিতিশীলতা কিংবা প্রান্তীয় ব্যক্তিত্ববিকৃতি, বার বার নিজের ক্ষতি করা |
কগনিটিভ অ্যানালিটিক থেরাপি | বর্তমান সমস্যার অতীত কারণ বোঝার চেষ্টা করা হয় এবং পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করা হয়। এতে সিবিটি-র সাথে অ্যানালিটিক থেরাপির সমন্বয় করা হয়ে থাকে। | খাদ্যগ্রহণে অনীহা, প্রান্তীয় ব্যক্তিত্ববিকৃতি |
সিবিটি-তে কাজ না হলে কী করব?
সিবিটি শুরু করলে চট করেই সব ঠিক হয়ে যাবে এমন নয়, আর সিবিটি-তে সবসময় সবার ক্ষেত্রে কাজও হয় না। মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা শোচনীয় হলে তখন এটির পেছনে সময় ও শ্রম ব্যয় করা দুঃসাধ্য মনে হতেই পারে।
এই পদ্ধতির কোনো কাজকে বেশি কঠিন মনে হলে কিংবা কাজ করে কোনো ফল হচ্ছে না মনে হলে আপনার থেরাপিস্টের সাথে কথা বলুন। যা আপনি করতে চান না তা নিয়ে তিনি জোর করবেন না। ভাল থেরাপিস্টের দায়িত্ব হচ্ছে সেবাগ্রহীতার জন্য উপযুক্ত গতিতে সেশন আয়োজন ও পরিচালনা করা এবং তার হাতে নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়ে তার সাথে মিলে একসাথে সিদ্ধান্ত নেওয়া কোন সেশনে কী করা যেতে পারে।
পরিবার কিংবা পরিচর্যাকারীদের সহযোগিতাও খুবই কাজে আসতে পারে। যেমন তারা আপনাকে আপনার ভয়ের মোকাবিলা করতে, আপনার দৈনন্দিন জীবনকে কাঠামোবদ্ধ করে তুলতে কিংবা আপনাকে আগের চেয়ে ঘন ঘন ঘর থেকে বের হতে সাহায্য করতে পারেন।
সিবিটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, আর সিবিটি-র পরিবর্তে কিংবা পাশাপাশি অন্যান্য চিকিৎসাপদ্ধতি কিংবা ওষুধও প্রয়োগ করা যেতে পারে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল অন্যান্য টকিং থেরাপি এবং অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের মতো ওষুধপত্র। প্রবল মানসিক অবসাদের ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদের ওষুধের পাশাপাশি সিবিটি প্রয়োগ করা উচিত। মানসিক অবস্থা অতিমাত্রায় শোচনীয় হলে চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে, তাই সেক্ষেত্রে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে আগে মনের অবস্থার একটু উন্নতি হলে তখন সিবিটি করা সহজ হয়ে আসতে পারে।
মনে রাখবেন, ইচ্ছা না থাকলে এখন না করে আপনি ভবিষ্যতেও সিবিটি করতে পারবেন। আর তা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সিবিটি সম্পর্কে পড়াশোনাও করে নিতে পারবেন কিংবা নিজে নিজেও তা করতে পারবেন (নিচে ‘আরও তথ্য’ নামক অংশটি দেখুন)।
আমার জীবনে সিবিটির কী কী প্রভাব পড়তে পারে?
মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগ খুবই অপ্রীতিকর। এগুলোর কারণে আপনার কাজ করা ও জীবনকে উপভোগ করার ক্ষমতা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সিবিটি করা হলে এই অবস্থাগুলোর উপশম হওয়ার এবং আপনার জীবনযাত্রার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। এর ফলে আপনার মনে শান্তি আসবে এবং ঘরে ও কর্মক্ষেত্রে আপনার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি সম্ভব হবে।
যদি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ি?
সিবিটির একটি সুবিধা হল সেশন শেষ হয়ে যাওয়ার পরও আপনি আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করা ও সেগুলোর চর্চা করার কাজ অব্যাহত রাখতে পারবেন। এতে আপনার লক্ষণ কিংবা সমস্যাগুলোর পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। তবে সেগুলো আবার দেখা দিলে, সিবিটি চলাকালে শেখা দক্ষতাগুলোর সহায়তায় আপনি সহজেই সেগুলোর মোকাবিলা করতে পারবেন। আর যদি প্রয়োজন মনে হয় তাহলে আরও একবার সিবিটি ‘ঝালিয়ে নেবেন’।
সিবিটি সেবা পাব কীভাবে?
এনএইচএস থেকে সিবিটি পাওয়া যাবে। নিচের বিষয়গুলোর কোনোটি যদি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় তাহলে আপনার জিপি আপনাকে সিবিটি-তে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিতে পারবেন:
- যদি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কোনো সমস্যা থেকে থাকে কিংবা
- যদি আপনার এমন কোনো মানসিক অসুস্থতা থেকে থাকে যার উপশম সিবিটি-র মাধ্যমে করা যেতে পারে।
ব্যক্তিটি সিবিটি সেবাদানকারী, মনস্তত্ত্ববিদ, মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক নার্স বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ―যে কেউই হতে পারেন।
আপনার যদি মনে হয় সিবিটি করা হলে আপনি উপকৃত হবেন তাহলে আপনি এনএইচএস-এর মনস্তাত্ত্বিক কোনো চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে দেখতে পারেন। ইমপ্রুভিং অ্যাক্সেস টু সাইকোলজিকাল থেরাপিজ প্রোগ্রাম (আইএপিটি)-এর মাধ্যমে আপনি আপনার জিপি-র সুপারিশ ছাড়াই তা করতে পারবেন।
আপনি যদি চান ও আর্থিকভাবে সক্ষম হন তাহলে টাকা দিয়ে একান্তেও আপনি সিবিটি সেবা নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে খরচে বেশ তারতম্য দেখা যায়, তবে সেশনপ্রতি খরচ সাধারণত ৪০ থেকে ১০০ পাউন্ডের মধ্যে থাকে। প্রাইভেট কয়েকটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে অসচ্ছল ব্যক্তিদেরকে কম খরচেও সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।
সিবিটি থেরাপিস্ট খোঁজার ক্ষেত্রে আপনার কাজে আসতে পারে এমন কয়েকটি ওয়েবসাইটের তথ্য এখানে দেওয়া হল:
- সাইকোথেরাপি ও মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা – রয়্যাল কলেজ অফ সাইকায়াট্রিস্ট্সের দেওয়া এই তথ্যে বিভিন্ন প্রকারের চিকিৎসা (থেরাপি) প্রাপ্তির উপায় সম্পর্কে আরও বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া আছে।
- এনএইচএস-এর মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসাসেবা (আইএপিটি) খুঁজে নিন – এনএইচএস-এর মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসাসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই ওয়েবপেইজটি আপনার কাজে আসবে।
- যুক্তরাজ্যের সিবিটি রেজিস্টার – স্বীকৃত সিবিটি থেরাপিস্ট খোঁজার জন্য এই তালিকাটি আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
- ব্রিটিশ সাইকোলজিক্যাল সোসাইটি (বিপিএস) – এই ওয়েবসাইটে আপনি চার্টারভুক্ত মনস্তত্ত্ববিদদের তালিকা পাবেন।
সিবিটি সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা
সিবিটি ও এর কার্যপ্রণালী নিয়ে মানুষের মধ্যে বেশ কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। সিবিটি সম্পর্কিত কয়েকটি ভ্রান্ত ধারণা ও সংশ্লিষ্ট বাস্তব তথ্য নিচে দেওয়া হল:
ভ্রান্তি | বাস্তবতা |
---|---|
সিবিটি মানে কেবল ইতিবাচক চিন্তা, এর চেয়ে বেশি কিছু নয় | আরও বেশি হিতকর ও বাস্তব উপায়ে চিন্তা করতে শেখার মাধ্যমে জীবনযাপনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা সম্ভব। |
সিবিটি দিয়ে ‘আসল সমস্যা’র সমাধান হয় না | জীবনে সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা আসবেই, আর সেই সবগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা কখনো সম্ভব হবে না। তবে কার্যকর উপায়ে সমস্যার মোকাবিলা করার সক্ষমতা সিবিটির মাধ্যমে বৃদ্ধি করা সম্ভব। |
অল্প সময়ে সহজেই সিবিটি করে ফেলা যায় | পুরনো অভ্যাস বদলাতে হলে সময় ও চর্চার প্রয়োজন, তবে একবার শিখে ফেললে নতুন অভ্যাস বহু দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। |
সিবিটিতে ব্যক্তির চেয়ে পদ্ধতিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় | আপনিই সিবিটির কেন্দ্রবিন্দু এবং নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই, আর যে যে বিষয়ে আপনার সাহায্য প্রয়োজন সেসবকে ঘিরেই সিবিটি সম্পন্ন হবে। |
সিবিটি দিয়ে আমার কিছুই হবে না | একনিষ্ঠভাবে সিবিটিতে অংশগ্রহণ করলে এবং উপকার হতে পারে এমন বিশ্বাস মনে বদ্ধমূল থাকলে তখন আপনার ক্ষেত্রে সিবিটি ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। |
সিবিটি স্বল্পস্থায়ী সমাধান | দূর ভবিষ্যতে আপনার জীবনযাপন কেমন হবে তা সিবিটির মাধ্যমে নির্ধারণ করা সম্ভব। |
আরও তথ্য
গেট সেলফ-হেল্প - সিবিটিসংক্রান্ত সেলফ-হেল্প ফ্রি তথ্য, সরঞ্জাম ও থেরাপির ওয়ার্কশিট।
এনএইচএস-এর মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য - মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা, এনএইচএস-এর সেবা এবং সঙ্কটকালে কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে সে সংক্রান্ত বিনামূলে্যের সামগ্রিক তথ্য।
সংস্থা
ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর বিহেভিওরাল অ্যান্ড কগনিটিভ সাইকোথেরাপিজ - সংস্থাটির কাছে সিবিটি সম্পর্কিত তথ্য এবং স্বীকৃত সিবিটি থেরাপিস্টদের তালিকা রয়েছে।
অ্যাংজাইটি ইউকে - সংস্থাটি যুক্তরাজ্যে মানসিক চাপ ও আতঙ্কসহ উদ্বেগজনিত যেকোনো সমস্যার ভুক্তভোগীদেরকে তথ্য ও সহায়তা প্রদান করে থাকে।
টেলিফোন: 03444 775 774
ইমেইল: support@anxietyuk.org.uk
ডিপ্রেশন ইউকে - সংস্থাটি মানসিক অবসাদে ভুক্তভোগীদের জন্য বন্ধুত্ব, সহায়তা ও তথ্যের জোগান দিয়ে থাকে। সেলফ-হেল্প গ্রুপ, ফেসবুক এবং ই-পেনফ্রেন্ড লিঙ্ক পাওয়া যাবে এই সংস্থাটির কাছ থেকে।
আরও পড়তে পারেন
রিডিং ওয়েল (বুকস্ অন প্রেসক্রিপশন) স্কিম – পেশাদারদের অনুমোদনপ্রাপ্ত এই কার্যক্রমটিতে সেলফ-হেল্প বই পড়ার মাধ্যমে ভাল থাকা যায়। এতে দেওয়া সবকটি বই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট রোগের ভুক্তভোগীদের দ্বারাই নির্বাচিত ও মনোনীত। এই বইগুলোর বিবরণ অনলাইনে দেওয়া আছে এবং পাবলিক লাইব্রেরিতে এগুলো বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। বইয়ের পাঁচটি তালিকা সেখানে দেওয়া আছে: প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য, ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য, তরুণ বয়সীদের জন্য, দীর্ঘস্থায়ী (শারীরিক) রোগের জন্য এবং ডিমেনশিয়ার জন্য।
অনলাইনে সিবিটি বিষয়ক তথ্য
বিটিং দ্য ব্লুজ – মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগ মোকাবিলার জন্য সেলফ-হেল্প সিবিটি কোর্স। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে এতে ফ্রি অ্যাক্সেস পাওয়া যায়।
লিভিং লাইফ টু দ্য ফুল – মানসিক অবসাদগ্রস্ত, মানসিক বিপর্যয় কিংবা উদ্বেগের ভুক্তভোগীদের জন্য জীবনমুখী দক্ষতার ফ্রি কোর্স।
হেডস্পেস – ফ্রি প্রারম্ভিক অনুশীলন সহ মননশীলতা বিষয়ক অ্যাপ।
কৃতজ্ঞতা
এখানে প্রদত্ত তথ্য সঙ্কলনের কৃতিত্ব রয়্যাল কলেজ অফ সাইকায়াট্রিস্ট্সের পাবলিক এঙ্গেজমেন্ট এডিটোরিয়াল বোর্ডের (পিইইবি)। এটি তৈরির সময় সর্বোৎকৃষ্ট যেসব প্রমাণাদি বিদ্যমান ছিল সেসবের ভিত্তিতেই এসব তথ্য লেখা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ লেখক: ড. পল ব্লেঙ্কায়রন
অনুরোধ সাপেক্ষে এই লেখাটির পূর্ণ তথ্যসূত্র পাওয়া যাবে।
প্রকাশনা: মার্চ ২০২২
আসন্ন পুনর্নিরীক্ষণ: মার্চ ২০২৫
© Royal College of Psychiatrists
This translation was produced by CLEAR Global (Jan 2024)