পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (PTSD) বা মানসিক আঘাতের পরবর্তী পীড়নমূলক মনোবিকৃতি

Post-traumatic stress disorder (PTSD)

Below is a Bengali translation of our information resource on post-traumatic stress disorder (PTSD). You can also view our other Bengali translations.

পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে (পিটিএসডি) বা মানসিক আঘাতের পরবর্তী পীড়নমূলক মনোবিকৃতিতে ভুগছেন এমন এবং পরিচিতদের মধ্যে পিটিএসডির ভুক্তভোগী আছেন এমন যেকোনো ব্যক্তির জন্য এই তথ্য্ প্রযোজ্য।

পিটিএসডি (PTSD) কী?

পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) একটি মানসিক রোগ। বেদনাদায়ক (ট্রমাটিক) কোনো ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার ফলে কেউ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে সে এই অবস্থার ভুক্তভোগীতে পরিণত হতে পারে।

বেদনাদায়ক কোনো ঘটনার শিকার হলে অনেকের মনেই নেতিবাচক আবেগ ও ভাবনার সৃষ্টি হয় এবং নেতিবাচক স্মৃতি মনে পড়তে থাকে। তবে এদের অধিকাংশই ধীরে ধীরে একসময় সেরে ওঠে। নেতিবাচক এই অনুভূতিগুলো চলে না গিয়ে বরং কারো দৈনন্দিন জীবন যাপনে বিঘ্ন ঘটাতে থাকলে তখন আশঙ্কা থাকে যে সেই ব্যক্তি পিটিএসডিতে ভুগছে।

পিটিএসডি হওয়ার কারণ কী?

যে কেউই পিটিএসডির ভুক্তভোগী হতে পারে। নিচের পরিস্থিতিগুলোর বা সেগুলো সংশ্লিষ্ট কোনো হুমকির সম্মুখীন হলে মানুষ পিটিএসডিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে:

  • মৃত্যু
  • গুরুতর আঘাত
  • যৌন সহিংসতা

নিচের উপায়গুলোর যেকোনোটির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি এসবের সম্মুখীন হতে পারে:

  • সরাসরি – তার সাথেই এসবের কোনোটি ঘটেছে
  • চোখে দেখা – সে অন্য কারো সাথে তেমন কোনো কিছু ঘটতে দেখেছে
  • জানা – সে জানতে পেরেছে যে খুবই নিকটজনদের কারো সাথে এসবের কোনোটি ঘটেছে
  • সংস্পর্শের পুনরাবৃত্তি – সে নিজেই বার বার বেদনাদায়ক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে কিংবা অন্য কারো সাথে ঘটেছে এমন বেদনাদায়ক ঘটনার সংস্পর্শে কোনো না কোনোভাবে সে বার বার এসেছে। আমরা একথাও জানি যে, বৈদ্যুতিক কোনো মিডিয়া, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র কিংবা কর্মক্ষেত্রে দেখা কোনো ছবির মধ্য দিয়ে বেদনাদায়ক কোনো ঘটনার সংস্পর্শে আসার ফলেও কারো কারো মধ্যে মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

মানসিকভাবে বিপর্যয়কর এমন ঘটনার মধ্যে রয়েছে:

  • অপঘাতে বা সহিংস কোনো উপায়ে কাউকে মারা যেতে দেখা
  • গুরুতর দুর্ঘটনা, যেমন: সড়ক দুর্ঘটনা
  • শারীরিক বা যৌন নির্যাতন
  • গুরুতর কোনো রোগে ভোগা কিংবা ইন্টেন্সিভ কেয়ারে থাকা
  • প্রসবকালীন জটিলতা
  • কেউ মারাত্মক কোনো রোগ রোগে ভুগছে বলে জানতে পারা
  • যুদ্ধবিগ্রহ
  • জঙ্গি হামলা
  • প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট কোনো দুর্যোগ, যেমন: জলোচ্ছ্বাস (সুনামি) কিংবা অগ্নিকাণ্ড

মনে রাখতে হবে যে, এখানে উল্লেখ করা হয় নি এমন আরো বহু ঘটনার ফলেও পিটিএসডি হতে পারে। আপনি যে ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন তা এখানে না থেকে থাকলে আপনার পক্ষে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহায়তা পাওয়ার উপায় খোঁজা উচিত হবে না―একথা ভাববেন না।

বেদনাদায়ক এসব ঘটনা আমাদেরকে এত নাড়া দেয় কেন?

বেদনাদায়ক এসব ঘটনা আমাদের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করার কারণ হচ্ছে আমরা এসব ঘটনাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। আমাদের চারপাশের জগৎ যেমন হবে বলে আমরা মনে করি তার সাথে এসব ঘটনা মেলে না।

প্রায়ই বেদনাদায়ক অনেক ঘটনাকে ‘বিক্ষিপ্ত’ ঘটনা মনে হয়, কিংবা সেগুলোর স্পষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। আমাদের চারপাশের জগৎ যেমন হবে বলে আমরা মনে করি তার সাথে এসব ঘটনা ঠিক খাপ খায় না, যার ফলে এসব ঘটনার অর্থ অনুধাবন করা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

তাছাড়া বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারি যে, আমাদের সাথে বা আমাদের আপনজনের সাথে যেকোনো মুহূর্তেই কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এর ফলে আমাদের মনে হয় যে, আমাদের জীবনে নিরাপত্তা নেই এবং আমরা হুমকির সম্মুখীন হয়ে আছি। এতে স্বাভাবিকভাবেই মনে ভয়ের সূচনা হয়। বেদনাদায়ক ঘটনার প্রভাবে মাঝে মাঝে আমরা নিজেদের পরিচয় বা ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ি, যার কারণেও মানসিক চাপের সৃষ্টি হতে পারে।

কারো পিটিএসডি হলে তখন কী হয়?

জীবনে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যয়কর বা বেদনাদায়ক কোনো না কোনো ঘটনার মুখোমুখি হয়ে থাকে। ইংল্যান্ডে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় তিনজনে একজন জীবনে অন্তত একটি বেদনাদায়ক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে বলে জানিয়েছে। তবে বেদনাদায়ক ঘটনার শিকার হলে যে কারো পিটিএসডি হবেই তা নয়।

বেদনাদায়ক কোনো অভিজ্ঞতা হওয়ার পর অনেকের মধ্যেই শোক, উদ্বেগ, অপরাধবোধ ও রাগের সঞ্চার হতে পারে। এর মানে এই নয় যে সে পিটিএসডিতে আক্রান্ত হয়েছে। পিটিএসডির ভুক্তভোগীদের মধ্যে সাধারণত নিচের উপসর্গগুলোর অনেকগুলোই দেখা যায়। এসব উপসর্গ ঘটনার একদম পর পরও দেখা দিতে পারে কিংবা কয়েক সপ্তাহ বা এমনকি কয়েক মাস পরেও দেখা দিতে পারে।

পিটিএসডি থাকলে এসব উপসর্গের কারণে আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে এবং/বা আপনার মধ্যে প্রচণ্ড রকমের মানসিক চাপের সৃষ্টি হবে। বেদনাদায়ক কোনো ঘটনার শিকার হওয়ার পর পরও যদি এসব উপসর্গের কোনো একটি আপনার মধ্যে দেখা দেয় তখনও কিন্তু চট করে বলা যাবে না আপনার পিটিএসডি হয়েছে।

পুনরানুভূতিজনিত উপসর্গ

  • স্মৃতি – বিপর্যয়কর ঘটনাটির অবাঞ্ছিত এমন সব স্মৃতি (যা অনাহূত ভাবনা বা ইনট্রুসিভ থট নামে পরিচিত) মনে পড়া যা মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে এবং মনে কষ্টের উদ্রেক করে।
  • স্বপ্ন – ঘটনাটি নিয়ে কষ্টদায়ক স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন দেখা।
  • বিচ্ছিন্নতামূলক প্রতিক্রিয়া বা ডিসোসিয়েটিভ রিঅ্যাকশন – বেদনাদায়ক ঘটনাটি আবারও ঘটছে বলে মনে হতে থাকা কিংবা তেমন আচরণ করা (এটি ফ্ল্যাশব্যাক নামে পরিচিত)। অবস্থার অনেক বেশি অবনতি ঘটলে আপনি পারিপার্শ্বিক জগৎ সম্পর্কে আর সচেতন নাও থাকতে পারেন।
  • শারীরিক ও মানসিক কষ্ট – কোনো কিছুর কারণে বেদনাদায়ক ঘটনাটির কথা কোনোভাবে মনে পড়ে গেলে তখন খুব মানসিক কষ্ট অনুভব করা এবং শারীরিকভাবে উত্তেজিত হয়ে ওঠা (যেমন: শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া, নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া)।

পরিহারমূলক উপসর্গ

  • বিচ্ছিন্নতামূলক বিস্মৃতি বা ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেশিয়া – বেদনাদায়ক ঘটনাটির কিছু অংশ আর মনে করতে না পারা।
  • বিচ্ছিন্নতা বা নিরাসক্তি – নির্লিপ্ত হয়ে পড়া কিংবা আগে আপন মনে হত এমন মানুষজনের প্রতি আর নৈকট্য অনুভব না করা।
  • কথাবার্তা ও চিন্তাভাবনা এড়িয়ে চলা – বেদনাদায়ক ঘটনা সম্পর্কে কথা বলতে কিংবা ভাবতে না চাওয়া।
  • সংশ্লিষ্টতা বা অনুষঙ্গ এড়িয়ে চলা – বেদনাদায়ক ঘটনাটির সাথে কোনোভাবে জড়িত সব স্মৃতি, ভাবনা, অনুভূতি, বস্তু, মানুষ ও স্থান এড়িয়ে চলা। এতে, টিভি এবং ঘটনাটি সম্পর্কিত অন্যান্য মাধ্যমের সংস্পর্শে আসার ফলে যদি মানসিক কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে সেসব এড়িয়ে চলার প্রবণতাও সৃষ্টি হতে পারে।

মেজাজগত উপসর্গ

  • নেতিবাচক বিশ্বাস ও প্রত্যাশা – নিজের, অন্যের কিংবা পুরো জগৎ সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করা।
  • দোষারোপ – বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটার জন্য কিংবা সেটির পরিণতির জন্য নিজেকে কিংবা অন্য কাউকে দোষারোপ করা।
  • নেতিবাচক আবেগ – ভয়, আতঙ্ক, রাগ, অপরাধবোধ কিংবা লজ্জা বার বার অনুভব করা।
  • কাজকর্মে আগ্রহ হারানো – আগে পছন্দ করতেন কিংবা নিয়মিত করতে পারতেন এমন কার্যকলাপে আর অংশগ্রহণ না করা কিংবা সেসবের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
  • ইতিবাচক আবেগ অনুভবে অক্ষমতা – সুখ, তৃপ্তি কিংবা ভালবাসা-সংশ্লিষ্ট অনুভূতি আর অনুভব করতে না পারা।

সতর্কতা ও প্রতিক্রিয়ামূলক উপসর্গ

  • অতিসতর্কতা – চারপাশে যা যা হচ্ছে সব সম্পর্কে অতিমাত্রায় সচেতন থাকা এবং আরাম (রিল্যাক্স) করতে না পারা।
  • সহজেই চমকে যাওয়া – বেদনাদায়ক ঘটনাটির কথা মনে করিয়ে দেয় এমন শব্দ কিংবা কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর নড়াচড়ার প্রতি বাড়াবাড়ি রকমের প্রতিক্রিয়া দেখানো।
  • সহজে মনোযোগ দিতে না পারা – আগে মনোযোগ দিয়ে করতে পারতেন এমন কাজে আর সহজে মনোযোগ দিতে না পারা।
  • ঘুমের ব্যাঘাত – সহজে ঘুম না ধরা এবং ধরলেও বার বার ঘুম ভেঙে যাওয়া। ঘুম হলেও হয়তো ভালো হয় না এবং দুঃস্বপ্নময় হয়।
  • খিটখিটে মেজাজ – চট করে উত্তেজিত হয়ে উঠে মানুষ বা বস্তুর প্রতি মৌখিক বা শারীরিক আগ্রাসন দেখানো। এই আকস্মিক আচরণের কারণ হতে পারে এমন কোনো অনুভূতি যার ফলে বেদনাদায়ক ঘটনাটির কথা আবার মনে পড়ে যায়।
  • বেপরোয়া মনোভাব – বিপজ্জনক কিংবা আত্মঘাতী কাজকর্ম করা।

পিটিএসডি কেন হয়?

পিটিএসডি কেন হয় তার কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে।

মনোস্তাত্ত্বিক

পিটিএসডির মনোস্তাত্ত্বিক উপসর্গগুলো খুবই অপ্রীতিকর ও বেদনাদায়ক। তবে, বেদনাদায়ক কোনো ঘটনার পরে আমাদেরকে রক্ষা করার জন্য আমাদের মন কী করে তা ভেবে দেখলে এই উপসর্গগুলোর উপস্থিতি ব্যাখ্যা করা যায়।

  • স্মৃতি – বেদনাদায়ক কোনো ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার পর অনেক সময় আমরা সেই ঘটনার স্মৃতি আর মনে করতে পারি না কিংবা চাই না। কী ঘটেছিল তা আবারও মনে করা কষ্টকর হলেও এটি করার মাধ্যমে আমরা ঘটনাটিকে ঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারি। মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
  • অনাহূত ভাবনা কিংবা ফ্ল্যাশব্যাক – এগুলো বেদনাদায়ক ঘটনাটির রিপ্লে’র মতো। এসবের ফলে, অতীতে যা ঘটেছিল তা নিয়ে ভাবতে আমরা বাধ্য হই। এর ফলে ভবিষ্যতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে সেক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে আগের চেয়ে বেশি প্রস্তুতি থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে, পিটিএসডি হলে তখন এসব ভাবনা কেবল কষ্টেরই উদ্রেক করে।
  • এড়িয়ে চলা এবং অসাড়তা – বেদনাদায়ক কোনো ঘটনার কথা মনে করার ফলে মনে অবসাদ ও কষ্টের সৃষ্টি হয়। সেসব স্মৃতি এড়িয়ে চলা এবং সেগুলোর প্রতি মনের অসাড়তা সৃষ্টির মাধ্যমে যা ঘটেছিল তা ভাবা থেকে মনকে বিরত রাখা যায়। তবে তা করা হলে বেদনাদায়ক সেই অভিজ্ঞতা ঠিকভাবে উপলব্ধি করাও মনের পক্ষে সম্ভব হয় না।
  • অতিসতর্কতা – আমাদের মনে হতে পারে যে, সারাক্ষণ সাবধান থাকলে হয়তো অন্য কোনো সঙ্কটের ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে আগের চেয়ে আরো দ্রুত কিছু করা সম্ভব হবে। দুর্ঘটনা বা সঙ্কটের পর যা যা করতে হবে তার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির যোগানও এ থেকে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এর ফলে অবসাদ চলে আসতে পারে, আর আগে ভালো লাগত এমন কাজ আর করা সম্ভব নাও হতে পারে।

শারীরিক

বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার সাথে শরীর ভুল উপায়ে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করলে তখন পিটিএসডির শারীরিক বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দেয়।

  • অ্যাড্রেনালিন – মানসিক চাপে থাকা অবস্থায় আমাদের দেহে এই হরমোনটি নিঃসৃত হয়। অনেক শক্তির দরকার হয় এমন কাজের জন্য―যেমন: দৌড়ানো কিংবা কারো সাথে ধস্তাধস্তি করে আত্মরক্ষা করার জন্য―দেহকে প্রস্তুত করতে এই হরমোনটি কাজে লাগে। মানসিক চাপ কমে গেলে দেহে অ্যাড্রেনালিনের পরিমাণ কমে আবার স্বাভাবিক হয়ে আসার কথা। কিন্তু পিটিএসডির ক্ষেত্রে মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী ঘটনাটির স্মৃতি মনে স্পষ্ট থাকার কারণে দেহে অ্যাড্রেনালিনের পরিমাণ অনেক সময় কমতে পারে না। বেশি অ্যাড্রেনালিনের উপস্থিতির ফলে স্নায়ু টান টান ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকা এবং আরাম করতে কিংবা ঠিকভাবে ঘুমোতে না পারার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • হিপোক্যাম্পাস – এটি মস্তিষ্কের এমন একটি অংশ যেখানে স্মৃতির প্রক্রিয়াকরণ হয়ে থাকে। অ্যাড্রেনালিনের মতো মানসিক চাপ-সংশ্লিষ্ট হরমোনের উপস্থিতিতে এটির স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে বেদনাদায়ক ঘটনার স্মৃতির প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হয় না। সেক্ষেত্রে সেই ঘটনাটিকে অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো বিষয় মনে হওয়ার পরিবর্তে এখনও বিদ্যমান একটি বিপত্তি বলে মনে হতে পারে। 

এমন কোনো পেশা কি রয়েছে যেখানে কর্মরতদের পিটিএসডি হওয়ার আশঙ্কা বেশি?

বেদনাদায়ক কোনো ঘটনার মুখোমুখি হলে যে কারো পক্ষেই পিটিএসডিতে আক্রান্ত হওয়া সম্ভব। তবে কিছু কিছু পেশার মানুষের পক্ষে বেদনাদায়ক ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে বেশি। তার মানে অন্যান্য পেশায় কর্মরতদের চেয়ে তাদের পিটিএসডিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এই শ্রেণীর পেশাজীবীদের মধ্যে রয়েছে:

  • জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মী (যেমন: পুলিশ, দমকলকর্মী কিংবা অ্যাম্বুলেন্সের কর্মী)
  • সমাজকর্মী
  • ইন্টেন্সিভ কেয়ারের দায়িত্বে থাকা কর্মী
  • সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং যুদ্ধক্ষেত্রে কর্মরত অন্যান্য লোকজন

পিটিএসডি কখন শুরু হয়?

বেদনাদায়ক ঘটনার ঠিক পর পরও পিটিএসডির উপসর্গ দেখা দিতে পারে, আবার কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পরও দেখা দিতে পারে। সাধারণত ঘটনার পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যেই উপসর্গগুলো প্রথম দেখা যায়। মাঝে মাঝে ৬ মাসের পরও উপসর্গ দেখা দিতে পারে, তবে তা তুলনামূলক দুর্লভ। দুর্ভাগ্যের কথা হচ্ছে, উপসর্গ যখন প্রথম দেখা দেয় তখন অনেককেই এ বিষয়ে কোনো সহায়তা বা পরামর্শ চাইতে দেখা যায় না।

বেদনাদায়ক ঘটনার পরবর্তী ১ মাসের মধ্যেই পিটিএসডি হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। ঘটনার পর তৎক্ষণাৎ যদি আপনার মধ্যে বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা-পরবর্তী উপসর্গগুলো দেখা দেয় এবং সেগুলো গুরুতর হয়ে ওঠে ও আপনার স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, সেক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যেতে পারে আপনি ‘স্বল্পস্থায়ী পীড়নজনিত মনোবিকৃতি’ বা অ্যাকিউট স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে ভুগছেন।

বেদনাদায়ক কোনো অভিজ্ঞতা হলে সবারই কেন পিটিএসডি হয় না?

বেদনাদায়ক কোনো অভিজ্ঞতার পর মাসখানেকব্যাপী অনেকের মধ্যেই মানসিক আঘাতজনিত কিছু উপসর্গ দেখা যায়। মানুষ বিপদে পড়লে বা বিপদে পড়েছে বলে কোনো কারণে মনে হলে এসব উপসর্গের অনেকগুলোই সেই পরিস্থিতির স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসাবেই তার মধ্যে দেখা দেয়। ধরে নিতে পারেন আপনার মস্তিষ্ক সেগুলোর মাধ্যমে আপনাকে নানা রকম অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে থাকে।

তবে অধিকাংশ মানুষই কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বেদনাদায়ক ঘটনার স্মৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয় (কারো কারো অবশ্য কখনো একটু বেশি সময়ও লাগে), আর তখন সেই উপসর্গগুলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের মানুষের পিটিএসডি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। নিচের বিষয়গুলো নিশ্চিত করা গেলে পিটিএসডি হওয়ার আশঙ্কা কমানো যায়:

  • সামাজিক দিক থেকে সহায়তা ও সমর্থন পাওয়া
  • বেদনাদায়ক ঘটনার পরবর্তীতে সেরে ওঠার সময় ‘নিম্ন মানসিক চাপসম্পন্ন পরিবেশে’ থাকা

কোন কোন ঘটনার ফলে পিটিএসডি হওয়ার আশঙ্কা বেশি?

মানসিকভাবে বিপর্যয়কর যেকোনো ঘটনার কারণেই পিটিএসডি হতে পারে, তবে ঘটনা যত বেশি অপ্রীতিকর হয় পিটিএসডি হওয়ার আশঙ্কা ততই বেড়ে যায়। যেমন, বেদনাদায়ক কোনো ঘটনার মধ্যে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে সেটির ফলে পিটিএসডি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে:

  • সেটি আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত হলে
  • সেটি দীর্ঘ সময় ধরে ঘটলে
  • সেটি ঘটার সময় আপনি আটকে থাকলে এবং বের হতে বা পালাতে না পারলে
  • সেটি মানবসৃষ্ট হলে
  • সেটিতে অনেক মানুষ মারা গেলে
  • সেটিতে কারো অঙ্গহানি হলে
  • সেটি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সাথে ঘটলে

পরবর্তীতেও যদি আপনি মানসিক চাপ ও অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার পক্ষে পিটিএসডির উপসর্গগুলো থেকে মুক্ত হওয়া আরো কঠিন হয়ে পড়বে।

বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছি কিনা বুঝব কীভাবে?

নিচের কাজগুলো করতে পারলে ধরে নিতে পারেন আপনি বেদনাদায়ক ঘটনাটির রেশ সম্ভবত কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন:

  • অতিরিক্ত মানসিক চাপের সম্মুখীন না হয়েই সেটি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে পারলে
  • সারাক্ষণ কোনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন এমন মনে না হলে
  • অসময়ে সেটি নিয়ে না ভেবে থাকতে পারলে

পিটিএসডি সবসময় ধরা পড়ে না কেন?

পিটিএসডি ধরা না পড়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।

লোকলজ্জা ও ভ্রান্ত ধারণা

বেদনাদায়ক ঘটনাটি নিয়ে যেন আবার ভাবতে না হয় তার জন্য পিটিএসডিতে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায়ই নিজের অনুভূতি নিয়ে কারো সাথে কোনো কথা বলতে চায় না।

কেউ কেউ মনে করে তাদের মধ্যে যে উপসর্গগুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো (যেমন: এড়িয়ে চলা এবং অসাড়তা) তাদেরকে বেদনাদায়ক ঘটনাটির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করছে, আর বুঝতে পারে না যে সেগুলো আসলে পিটিএসডির কারণে হচ্ছে।

অনেক বেশি অসুস্থ থাকাকালে অনেকের পক্ষেই একথা বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পড়ে যে, বেদনাদায়ক ঘটনার আগের মতো অবস্থায় তারা আবারও একসময় ফিরে যেতে পারবে। এমন মনোভাবের কারণে অনেক সময় অনেকে আর কোনো রকম সহায়তা পাওয়ার চেষ্টাও করে না।

শুধু সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরই পিটিএসডি হয়―এমন একটি ভ্রান্ত ধারণা মানুষের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। আসলে যে কারোরই পিটিএসডি হতে পারে, আর কারো পিটিএসডির অভিজ্ঞতাই উপেক্ষা করার মতো নয়।

রোগ নির্ণয়ে ভুল হওয়া

পিটিএসডিতে আক্রান্ত কারো কারো ক্ষেত্রে অনেক সময় ভুলক্রমে ভাবা হয় তারা উদ্বেগ (অ্যাংজাইটি) কিংবা বিষণ্নতায় (ডিপ্রেশন) ভুগছে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে মনোস্তাত্ত্বিক বা শারীরিক অন্যান্য সমস্যার আড়ালে থাকায় পিটিএসডি ধরা পড়ে না।

অনেকের মধ্যে নিচের উপসর্গগুলোর মতো ‘চিকিৎসাবিজ্ঞানের ব্যাখ্যাতীত শারীরিক উপসর্গ’ থাকতে পারে:

  • পেটে (গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল) সমস্যা
  • বিভিন্ন পেইন সিনড্রোম (ব্যথা)
  • মাথাব্যথা

এসব উপসর্গের উপস্থিতির কারণে পিটিএসডির পরিবর্তে অন্য কোনো সমস্যা হয়েছে বলে ভুলক্রমে ধারণা করে নেওয়া হতে পারে।

অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা

পিটিএসডিতে আক্রান্ত কারো কারো ক্ষেত্রে অন্যদের সাথে সম্পর্কগত জটিলতা কিংবা মদ্যপান বা মাদকের ওপর নির্ভরতার মতো সমস্যাও দেখা যেতে পারে। কখনো কখনো পিটিএসডির কারণেই এসব হলেও এই ধরনের সমস্যাগুলোই বেশি করে চোখে পড়ার কারণে পিটিএসডি অজ্ঞাতই থেকে যেতে পারে।

বাচ্চাদের কি পিটিএসডি হতে পারে?

যেকোনো বয়সেই পিটিএসডি হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে পরিলক্ষিত উপসর্গগুলোর পাশাপাশি বাচ্চাদের মধ্যে আরো যেসব উপসর্গ দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • ভয়ের স্বপ্ন – বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এসব স্বপ্নে সত্যিকারের বেদনাদায়ক ঘটনাটি উঠে আসতেও পারে, আবার নাও আসতে পারে।
  • খেলায় পুনরাবৃত্তি – খেলার সময় অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চাদের কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে বেদনাদায়ক ঘটনাটি খেলা হিসাবেই আবারও উঠে আসতে পারে। যেমন, গুরুতর সড়ক দুর্ঘটনার শিকার কোনো বাচ্চা খেলনা গাড়ি দিয়ে নিজেই তেমন দুর্ঘটনা খেলায় ছলে ঘটাতে পারে। 
  • শারীরিক উপসর্গ – তারা পেটে ও মাথায় ব্যথা করছে বলতে পারে।
  • শীঘ্রই মারা যাবে এমন মনে হওয়া – বড় হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে একথা বিশ্বাস করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

পিটিএসডির চিকিৎসা কী কী?

পিটিএসডির বিভিন্ন প্রকারের চিকিৎসা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানসিক আঘাতকেন্দ্রিক জ্ঞানীয় আচরণমূলক চিকিৎসা বা ট্রমা-ফোকাস‍্ড কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি (TF-CBT), চক্ষু সঞ্চালনের মাধ্যমে সংবেদনশীলতা হ্রাসকরণ ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ বা আই মুভমেন্ট ডিসেনসিটাইজেশন অ্যান্ড রিপ্রোসেসিং (EMDR) এবং নানা রকম ঔষধ।

মনোচিকিৎসা (সাইকোথেরাপি)

পিটিএসডির মনোচিকিৎসায় অতীত জীবনের পরিবর্তে বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এর ফলে নিচের বিষয়গুলো করা সহজ হয়ে আসে:

  • মেনে নেওয়া – যা ঘটে গেছে তা বদলাতে না পারলেও সেই ঘটনা, নিজের আশেপাশের জগৎ ও নিজের জীবন সম্পর্কে যে অন্যভাবে ভাবতে পারা যেতে পারে তা মেনে নিতে শেখা।
  • ঘটনাটি মনে করা – যা ঘটেছে তা মনে করতে গিয়ে ভয় ও উদ্বেগে আচ্ছন্ন না হয়ে পড়া। ঘটনাটি সম্পর্কে তখন আপনি নিজের ইচ্ছামতো ভাবতে পারবেন, অনাহূত ভাবনা ও ফ্ল্যাশব্যাকের চাপে অনিচ্ছাসত্ত্বেও ভাবতে আর বাধ্য হয়ে পড়বেন না।
  • নিজের অভিজ্ঞতাকে কথায় প্রকাশ করতে পারা – যা ঘটেছে তা সম্পর্কে কথা বলতে পারা, যেন তার ফলে আপনার মন সেসব স্মৃতিকে গুছিয়ে সরিয়ে রাখতে পারে এবং আপনি অন্যান্য বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারেন।
  • আগের চেয়ে নিরাপদ বোধ করা – আবেগগুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এমন অনুভূতি জোরদার করতে সহায়তা করা। এতে আপনি আরো নিরাপদ বোধ করবেন, যার ফলে আপনাকে সেই স্মৃতিগুলো আর আগের মতো এড়িয়ে চলতে হবে না।

যেকোনো রকমের মনোচিকিৎসাই সঠিকভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অনুমোদিত চিকিৎসকের কাছ থেকে নেওয়া উচিত। সাধারণত এক্ষেত্রে সপ্তাহে অন্তত একবার করে চিকিৎসার জন্য একই চিকিৎসকের (থেরাপিস্ট) কাছে যেতে হয় এবং মোটামুটি ৮–১২ সপ্তাহ পর্যন্ত চিকিৎসা চলে।

সাপ্তাহিক ভিজিট বা সেশন সচরাচর এক ঘন্টার হয়ে থাকে। তবে প্রয়োজনে তা ৯০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে।

পিটিএসডির চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

মানসিক আঘাতকেন্দ্রিক জ্ঞানীয় আচরণমূলক চিকিৎসা (টিএফ-সিবিটি)

এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হলে কথা বলার (টকিং থেরাপি) মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে ভুক্তভোগীর চিন্তাধারা বদলে যেতে থাকে। এতে আস্তে আস্তে মনের অবস্থার উন্নতি হয় এবং আচরণে পরিবর্তন আসে। এই পদ্ধতিতে সাধারণত একক চিকিৎসা করা হয়ে থাকে, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দলগত চিকিৎসার মাধ্যমেও টিএফ-সিবিটি পদ্ধতিতে ফল পাওয়া গেছে।

ইএমডিআর (চক্ষু সঞ্চালনের মাধ্যমে সংবেদনশীলতা হ্রাসকরণ ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ)

চোখের নড়াচড়ার মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে মস্তিষ্ককে স্মৃতি প্রক্রিয়াকরণ করতে সাহায্য করা হয়।

এতে চিকিৎসা চলাকালে আপনাকে বলা হবে বেদনাদায়ক ঘটনাটি মনে করে তা আপনার মনে কেমন ভাবনা ও অনুভূতির সৃষ্টি করে তা নিয়ে চিন্তা করতে। আর তা করার সময় আপনাকে এদিকে-সেদিকে তাকাতে বলা হবে কিংবা হাতে টোকা দেওয়ার মতো কোনো ‘দ্বিপাক্ষিক উদ্দীপনা’ (বাইল্যাটারাল স্টিমুলেশন) দেওয়া হবে। দেখা গেছে এতে বেদনাদায়ক ঘটনা-সংশ্লিষ্ট স্মৃতির তীব্রতা কমে আসে, যার ফলে ঘটনাটির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া সহজ হয়।

ইএমডিআর পদ্ধতির চিকিৎসা প্রশিক্ষিত কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে গ্রহণ করা উচিত। সাধারণত ৬০–৯০ মিনিটের ৮–১২টি সেশনের মাধ্যমে ইএমডিআর করা হয়ে থাকে।

ইএমডিআর কিংবা টিএফ-সিবিটিতে ভালো কাজ না হলে নির্দিষ্ট কোনো উপসর্গ (যেমন: ঘুমের ব্যাঘাত) সারানোর জন্য অন্য কোনো ধরনের কথাভিত্তিক চিকিৎসা (টকিং থেরাপি) গ্রহণ করা যেতে পারে।

ঔষধ

পিটিএসডির অন্যান্য চিকিৎসায় কাজ না হয়ে থাকলে ডাক্তার তখন বিষণ্নতারোধী ঔষধ (অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট) দিতে পারে।

পিটিএসডির উপসর্গ প্রশমনে কাজে আসতে পারে এমন এক রকম বিষণ্নতারোধী ঔষধ হচ্ছে নির্বাচনমূলক সেরোটোনিন পুনর্গ্রহণ অবদমনকারী ঔষধ বা সিলেক্টিভ সেরোটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটর (SSRI)। পিটিএসডির পাশাপাশি বিষণ্নতা থাকলে বিষণ্নতারোধী ঔষধে উপকার হতে পারে।

এসএসআরআইতে কাজ না হলে তখন হয়তো অন্যান্য ঔষধও দেওয়া হতে পারে, তবে তা সাধারণত মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী দেওয়া হয়।

কোন চিকিৎসায় সবচেয়ে ভালো কাজ হয়?

বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগের ফলাফল থেকে দেখা গেছে যে, প্রথম পর্যায়ের মনোচিকিৎসা হিসাবে সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে টিএফ-সিবিটি ও ইএমডিআর পদ্ধতি। যারা কথাভিত্তিক চিকিৎসা চায় না কিংবা যাদের পক্ষে তা করানো সম্ভব নয় তাদের ক্ষেত্রে ঔষধে উপকার হতে পারে।

কোন চিকিৎসা আগে করানো উচিত?

সম্ভব হলে ঔষধের আগে মানসিক আঘাতকেন্দ্রিক মনোস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা (টিএফ-সিবিটি কিংবা ইএমডিআর) করিয়ে দেখা উচিত। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার এক্সিলেন্স (NICE) থেকেও তাই করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

নিজের জন্য আমার কী কী করার আছে?

পিটিএসডি থেকে সেরে ওঠার প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত করতে চিকিৎসার পাশাপাশি আপনার আরো কিছু করণীয় রয়েছে। এসব কাজে আপনার চিকিৎসক আপনাকে সাহায্য করবেন এবং আপনি সঠিক সময়ে এসব করছেন কিনা সেদিকেও তিনি খেয়াল রাখবেন:

  • দৈনন্দিন রুটিন বজায় রাখুন – সম্ভব হলে আপনার নিত্যদিনের কাজকর্ম আগের মতোই নিয়মমাফিক করার চেষ্টা করুন। দৈনন্দিন কার্যকলাপ যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখা হলে আপনার মনে বিশ্বাস জাগবে যে, আপনার জীবনে স্থিতিশীলতা রয়েছে।
  • বিশ্বাসভাজন কারো সাথে কথা বলুন – যা ঘটেছে তা নিয়ে যার-তার সাথে কথা বলতে হবে এমন ভাবার প্রয়োজন নেই। তবে আপনার আস্থা রয়েছে এমন কারো সাথে কথা বললে নিরাপদ একটি পরিস্থিতিতে আপনার বেদনাদায়ক স্মৃতির সাথে আপনি খাপ খাইয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। আপনার মতো একই অভিজ্ঞতা কিংবা আপনার কাছাকাছি অভিজ্ঞতা হয়েছে এমন কারো সাথে কথা বললে আরো উপকার হতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন তা করতে গিয়ে আপনি বেশি মানসিক চাপের সম্মুখীন না হন।
  • মনের জন্য আরামদায়ক কার্যকলাপ করুন – একা একাই ধ্যান (মেডিটেশন) কিংবা অন্যান্য কার্যকলাপের মাধ্যমে আরাম (রিল্যাক্স) করার চেষ্টা করুন। পিটিএসডিতে ভোগার সময় মনের পক্ষে আরাম করা বা বিশ্রাম নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে, তাই আপনার ক্ষেত্রে কোন কোন কার্যকলাপে ফল হতে পারে তা সম্পর্কে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • আবার কাজে বা স্কুলে যাওয়া শুরু করুন – সক্ষমতা থাকলে কাজে, স্কুল-কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার যাওয়া শুরু করুন। এতে আগের চেয়ে ভালো লাগতে পারে। এতে আপনি আবার নিত্যকার নিয়মমাফিক জীবনের স্বাদ পাবেন। তবে সাবধান থাকতে হবে যেন মানসিকভাবে আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়া কিংবা তীব্র মানসিক চাপের সম্মুখীন হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতিতে আপনি না পড়েন। সাধারণত চিকিৎসা না হওয়া পর্যন্ত সহায়তাপূর্ণ, নিম্ন মানসিক চাপসম্পন্ন পরিবেশে কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
  • নিয়মিত খাওয়াদাওয়া ও ব্যায়াম করুন – ক্ষুধা না থাকলেও আগের সময়মতোই খাওয়ার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে নিয়মিত ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। এতে শরীরে ক্লান্তি আসবে এবং ঘুমও সহজে ধরবে।
  • মানুষজনের সাথে সময় কাটান – কাছের মানুষদের সাথে সময় কাটালে আপনার ভালো লাগবে এবং মনে জোর পাবেন।
  • ধরেই নিন আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন – ধীরে ধীরে একসময় সুস্থ হয়ে উঠবেন এই বিশ্বাস বদ্ধমূল থাকলে সেরে ওঠা আপনার জন্য সহজ হবে। তবে অতিদ্রুত জোর করে সেরে ওঠার জন্য নিজের মনের ওপর চাপ দেবেন না।
  • বেদনাদায়ক ঘটনাটি যেখানে ঘটেছিল সেখানে ফিরে যান – বেদনাদায়ক ঘটনাটি যেখানে ঘটেছিল সেখানে আবারও ফিরে যাওয়ার কথা ভেবে দেখতে পারেন―তবে মানসিকভাবে প্রস্তুত আছেন মনে হলেই কেবল তা করবেন। আর করার আগে আপনার ডাক্তার কিংবা থেরাপিস্টের সাথে কথা বলে নেবেন, যেন তিনি আপনাকে দরকারমতো সহায়তা করতে পারেন।

সেরে ওঠার সময় কিছু বিষয় নিয়ে এবং কিছু কাজ করা নিয়ে আপনার সাবধান থাকা উচিত। তবে ‘ঠিক কাজ’ করা খুবই কঠিন, তাই নিজের মধ্যে নিচের কোনোটির উপস্থিতি লক্ষ করলেও আপনার অপরাধবোধ অনুভব করা উচিত নয়:

  • আত্মসমালোচনা – পিটিএসডির উপসর্গগুলো দুর্বলতার লক্ষণ নয়। বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার খুবই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সেগুলো।
  • অনুভূতি নিজের মাঝে চেপে রাখা – আপনার পিটিএসডি থাকলে অন্যদের সাথে নিজের ভাবনা ও অনুভূতি নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করবেন না। মনের অবস্থা নিয়ে কথা বললে তাতে আরো দ্রুত সেরে ওঠার সম্ভাবনা বাড়ে।
  • সবকিছু সাথে সাথেই আবার আগের মতো হয়ে যাবে ভাবা – পিটিএসডির চিকিৎসা একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। নিজের কাছ থেকে বেশি জলদি বেশি কিছু আশা করবেন না।
  • সবার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকা – দীর্ঘ সময় একা একা কাটালে আপনার মধ্যে সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার অনুভূতি প্রকট হয়ে উঠতে পারে এবং তাতে আপনার মনের অবস্থার আরো অবনতি হতে পারে।
  • মদ্যপান ও ধূমপান করামদ্যপানের মাধ্যমে আপনি শরীর বা মনের শৈথিল্য পাবেন ঠিকই, কিন্তু এর ফলে পরবর্তীতে আপনার আরো বেশি খারাপ লাগতে পারে। কফি ও নিকোটিন থেকে উদ্দীপনা পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু পিটিএসডির উপসর্গ থাকলে সেই উদ্দীপনায় বরং আরো বেশি খারাপ লাগতে পারে।
  • অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়া – পিটিএসডির ফলে ঘুমের অনেক অসুবিধা হতে পারে। তবে আপনার ঘুমের স্বাভাবিক নিয়ম যথাসম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করুন এবং রাত জাগা থেকে বিরত থাকুন, নয়তো আপনার আগের চেয়েও বেশি খারাপ লাগতে পারে। ভালোভাবে ঘুমোনো সম্পর্কে আমাদের লেখা থেকে আপনি এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন।

সবশেষে, গাড়ি চালানোর সময়ও আপনার সাবধান থাকা উচিত এবং গাড়ি চালানো নিরাপদ মনে না হলে আপনার উচিত তা চালক ও যানবাহন অনুমোদনকারী এজেন্সি বা ডিভিএলএ-কে (DVLA) জানানো। বেদনাদায়ক কোনো অভিজ্ঞতা হওয়ার পর মানুষের পক্ষে দুর্ঘটনা ঘটানোর প্রবণতা বাড়ে।

কমপ্লেক্স পিটিএসডি কী?

কিছু কিছু মানুষকে মাঝে মাঝে মানসিক আঘাতের পরবর্তী পীড়নমূলক জটিল মনোবিকৃতিতে (কমপ্লেক্স পিটিএসডি) ভুগতে দেখা যায়। অতিমাত্রায় আশঙ্কাজনক বা বিভীষিকাময় এক বা একাধিক ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার ফলে এটি হয়ে থাকে। এসব ঘটনা শৈশবেও ঘটে থাকতে পারে, আবার প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থাতেও ঘটে থাকতে পারে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এসব ঘটনা এড়ানো কিংবা এগুলো থেকে পালিয়ে বাঁচা কঠিন বা অসম্ভব ছিল। এমন ঘটনার উদাহরণের মধ্যে রয়েছে:

  • নির্যাতন
  • দাসত্ব
  • পরিকল্পিত গণহত্যা
  • যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় বসবাস করা
  • দীর্ঘ সময় ধরে চলা গৃহনির্যাতন
  • শৈশবে যৌন কিংবা শারীরিক নির্যাতনের পুনরাবৃত্তি। 

কমপ্লেক্স পিটিএসডিতে আক্রান্তদের মধ্যে পিটিএসডির উপসর্গগুলোর পাশাপাশি নিচের বিষয়গুলো দেখা যায়:

  • তারা ‘হীন হয়ে গেছে, হেরে গেছে কিংবা তাদের কোনো মূল্য নেই’―নিজের সম্পর্কে এ জাতীয় অতিমাত্রায় নেতিবাচক বিশ্বাস তাদের মধ্যে শেকড় গেড়ে বসে
  • নিজেদের আবেগ এবং আবেগ-সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা তাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পড়ে
  • কারো সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং অন্যের নৈকট্য অনুভব করা তাদের জন্য অত্যন্ত দুরূহ হয়ে ওঠে

কমপ্লেক্স পিটিএসডি থেকে আমি আমি কীভাবে সেরে উঠতে পারি?

কমপ্লেক্স পিটিএসডিতে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায়ই অন্য সবার ও পুরো জগতের প্রতি আস্থার অভাব দেখা যায়। চিকিৎসকের (থেরাপিস্ট) সাথে নিরাপদ একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে সময় লাগে বলে এর চিকিৎসাও তুলনামূলক দীর্ঘস্থায়ী হয়। কমপ্লেক্স পিটিএসডিতে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে চিকিৎসকের সহায়তায় যা যা করতে হয় সেসব সাধারণত তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়:

স্থিতিশীলতা সৃষ্টি (স্ট্যাবিলাইজেশন)

স্থিতিশীলতা সৃষ্টির পর্যায়টিতে আপনি আপনার চিকিৎসকের ওপর আস্থা রাখতে এবং নিজের মনের কষ্ট ও বিচ্ছিন্নতা বা নিরাসক্তি-সংশ্লিষ্ট অনুভূতিগুলোকে বুঝতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে শিখবেন।

এই পর্যায়টির অংশ হিসাবে আপনাকে ‘স্থিতিশীলতা’ বা গ্রাউন্ডিংয়ের কৌশল শিখতে হতে পারে। এতে সাধারণ, শারীরিক অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে আপনি নিজেকে মনে করিয়ে দিতে পারবেন যে, আপনি অতীতে নয় বরং বর্তমানে আছেন।

আপনার ভয় ও উদ্বেগের অনুভূতির মূলে যেসব স্মৃতি ও আবেগ রয়েছে সেগুলোকে অনুভূতিগুলো থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ করতে সাহায্য করবে স্থিতিশীলতা সৃষ্টির এই পর্যায়টি। এর ফলে সেই স্মৃতিগুলোর প্রতি আপনার ভয়ও কমে আসবে।

স্থিতিশীলতা সৃষ্টির পর্যায়টির উদ্দেশ্য হল আপনি যেন ভবিষ্যতে এক পর্যায়ে উদ্বেগ- ও ফ্ল্যাশব্যাক-মুক্ত জীবন যাপন করতে সক্ষম হন তার ব্যবস্থা করা।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, শুধু এই পর্যায়টির চিকিৎসার ফলেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।

মানসিক আঘাতকেন্দ্রিক চিকিৎসা বা ট্রমা-ফোকাস‍্ড থেরাপি

ইএমডিআর ও টিএফ-সিবিটির মতো মানসিক আঘাতকেন্দ্রিক চিকিৎসার মাধ্যমে বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করা হয়। মনোগতিবিদ্যাগত মনোচিকিৎসাসহ (সাইকোডাইনামিক সাইকোথেরাপি) অন্যান্য নানা রকমের চিকিৎসার মাধ্যমেও উপকার পাওয়া যেতে পারে। কমপ্লেক্স পিটিএসডির চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাবধানতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সঠিক পন্থা অবলম্বন করা না হলে এসব চিকিৎসায় বরং অবস্থার আরো অবনতি হতে পারে।

পুনঃসংযোগ (রিইন্টিগ্রেশন বা রিকানেকশন)

এখন যেহেতু পরিস্থিতি আগের মতো আর বিপজ্জনক নয় সেহেতু বাঁধাধরা দৈনন্দিন জীবনে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে আপনি আবারও বাস্তব জগতে জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারবেন। এর ফলে, স্বতন্ত্র অধিকার ও ইচ্ছাসম্পন্ন একজন মানুষ হিসাবে আপনি নিজেকে আবার গণ্য করা শুরু করতে পারবেন।

পুনঃসংযোগের ফলে আপনি সহজে:

  • নিজের ও অন্যদের অভিজ্ঞতাকে সহমর্মিতা সহকারে বুঝতে পারবেন
  • নিজের ও অন্যদের ওপর আবারও আস্থা রাখতে পারবেন
  • আপনার স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য মঙ্গলকর বন্ধুত্বের সম্পর্ক, অন্তরঙ্গ সম্পর্ক এবং কার্যকলাপের সাথে আবারও জড়িত হয়ে পড়তে পারবেন

ঔষধ

পিটিএসডির মতো এক্ষেত্রেও বিষণ্নতারোধী ঔষধ (অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট) কিংবা অন্যান্য ঔষধ এবং মনোচিকিৎসা (সাইকোথেরাপি) কাজে আসতে পারে। মনোচিকিৎসায় কাজ না হলে কিংবা তা আপনার পক্ষে করানো সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রেও ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। তবে ঔষধ ব্যবহারের আগে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া শ্রেয়।

স্বসহযোগ (সেল‍্ফ-হেল্প)

কমপ্লেক্স পিটিএসডি থাকলে, আপনার অতীতের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতাটির সাথে কোনো সম্পর্ক নেই এমন স্বাভাবিক কাজকর্ম করার চেষ্টা করলে আপনি উপকার পেতে পারেন। এসব কাজকর্মের মধ্যে রয়েছে:

  • মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করা
  • চাকরিবাকরি করা
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • আরাম করার (রিল্যাক্সেশন) পদ্ধতি শেখা
  • শখের বশে কিছু করা
  • পশুপাখি পোষা।

এসব করার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে চারপাশের জগতের প্রতি আস্থা রাখতে পারা আপনার জন্য সহজ হয়ে আসবে। তবে এতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে। আর এসব কাজকে কঠিন মনে হওয়া কিংবা তৎক্ষণাৎ এসব করতে না পারা নিয়ে লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই।

কারো পিটিএসডি হয়েছে কিনা বুঝব কীভাবে?

পরিচিত কারো সম্প্রতি বেদনাদায়ক কোনো অভিজ্ঞতা হয়ে থাকলে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল করা যেতে পারে। এই উপসর্গগুলো উপস্থিত থাকলে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, বেদনাদায়ক স্মৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের অসুবিধা হচ্ছে:

  • আচরণের পরিবর্তন – কর্মক্ষেত্রে অবনতি, দেরি করা, অসুস্থতার জন্য ছুটি নেওয়া, ছোটখাটো দুর্ঘটনায় পড়া
  • আবেগের পরিবর্তন – রাগ, খিটখিটে মজাজ, বিষণ্নতা, নিরাসক্তি এবং একাগ্রতার অভাব
  • চিন্তাভাবনার পরিবর্তন – ঝুঁকি বা ভয় নিয়ে দুশ্চিন্তা মন থেকে দূর না হওয়া, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
  • অপ্রত্যাশিত শারীরিক উপসর্গ – শ্বাসকষ্ট, উসখুস করা কিংবা পেটে ব্যথা

কারো মধ্যে পিটিএসডির উপসর্গ আছে বলে মনে হলে আপনার উচিত তাকে তার ডাক্তারের (জিপি) সাথে কথা বলার জন্য উৎসাহিত করা। যদি সেই ব্যক্তি আপনার বেশি পরিচিত না হয় এবং ফলে একথা আপনি তাকে বলতে না পারেন তাহলে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে এমন কাউকে আপনার একথা জানানো উচিত, যেন সে-ই তখন সেই ব্যক্তিকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলতে পারে।

এই লেখাটির মতো পিটিএসডি বিষয়ক তথ্য পড়ে জানার মাধ্যমেও তারা উপকৃত হতে পারবে। এতে নিজেদের সমস্যা সনাক্ত করে সমাধান করা তাদের পক্ষে সহজ হবে।

বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা হয়েছে এমন কাউকে আমি সহায়তা কীভাবে করতে পারি?

বেদনাদায়ক কোনো ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে এমন কাউকে নিচের কাজগুলো করার মাধ্যমে সহায়তা করা সম্ভব:

  • কথা বলতে দেওয়া – সময় নিয়ে তাকে নিজের মতো করে তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলতে দিন।
  • কথা শোনা – তাকে কথা বলতে দিন। তার কথায় বাধা দেবেন না কিংবা আপনার নিজের অভিজ্ঞতার কথাও বলতে যাবেন না।
  • সাধারণ প্রশ্ন করা – প্রশ্ন করতে হলে সাধারণ প্রশ্ন করুন, আর এমন প্রশ্ন করুন যেন তা শুনে মনে না হয় আপনি তার সমালোচনা করছেন। যেমন, জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘অন্য কারো সাথে এ নিয়ে কথা হয়েছে?’ কিংবা ‘আমি আরো কোনোভাবে সহায়তার ব্যবস্থা করতে পারি?’

যেসব বিষয় থেকে বিরত থাকা উচিত সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • তার মনের অবস্থা কেমন তা আপনি বুঝতে পারছেন একথা বলা – আপনার নিজেরও হয়তো একই রকম কোনো অভিজ্ঞতা হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু একই পরিস্থিতি প্রতিটি মানুষ খুবই ভিন্নভাবে উপলব্ধি করে থাকে। তাই আপনাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে তুলনা করলে তাতে উপকার নাও হতে পারে।
  • সে যে বেঁচে গেছে এটাই সৌভাগ্যের ব্যাপার এমন কথা বলা – বেদনাদায়ক ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তি অনেক সময়ই নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করে না। প্রায়ই দেখা যায় যে, বেদনাদায়ক ঘটনাটিতে অন্য আরো কেউ মারা গিয়ে থাকলে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি তারপর নিজে বেঁচে গেছে বলে অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করে।
  • তার অভিজ্ঞতাকে লঘু করা – যা ঘটেছে তার চেয়ে অবস্থা আরো খারাপ হতে পারত―এ জাতীয় কথা স্বান্তনা দেওয়ার উদ্দেশ্যেও বলবেন না। কারণ এমন কথা শুনলে ভুক্তভোগীদের মনে পারে যে তাদের অনুভূতিগুলো অযৌক্তিক।
  • কাজে লাগবে না এমন পরামর্শ দেওয়া – পরামর্শ দেবেন না। অতীতে একই পরামর্শে আপনি উপকার পেয়ে থাকলেও তা দেবেন না। কারণ প্রত্যেকটি মানুষই আলাদা হয়, আর অনেক ক্ষেত্রেই দেখবেন আপনার যা বলছেন তা সে ইতোমধ্যেই করে দেখেছে।

আরো সহায়তা

পিটিএসডি সম্পর্কিত তথ্য

ইউকে সাইকোলজিক্যাল ট্রমা সোসাইটি – এখানে মানসিক আঘাতের পরবর্তী পীড়নজনিত প্রতিক্রিয়া বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস রিঅ্যাকশন সম্পর্কে সাধারণ জনগণ ও স্বাস্থ্য খাতের পেশাদার কর্মীদের জন্য উপযুক্ত তথ্য পাবেন।

এক নজরে পিটিএসডি, এনএইচএস – এখানে পিটিএসডি নিয়ে এনএইচএসের (NHS) দেওয়া তথ্য পাবেন

এক নজরে কমপ্লেক্স পিটিএসডি, এনএইচএস – এখানে কমপ্লেক্স পিটিএসডি নিয়ে এনএইচএসের (NHS) দেওয়া তথ্য পাবেন

পিটিএসডি, মাইন্ড – মাইন্ড নামের দাতব্য সংস্থাটির সংগ্রহে পিটিএসডি ও কমপ্লেক্স পিটিএসডির ওপর তথ্য রয়েছে

বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের কী কী সাহায্য করার আছে? মাইন্ড – পরিচিত কারো পিটিএসডি থাকলে তাকে কীভাবে সাহায্য করা যেতে পারে তা নিয়ে এই তথ্যে কিছু উপায় বাতলে দেওয়া আছে

প্রয়োজনীয় কিছু যোগাযোগের ঠিকানা, মাইন্ড – পিটিএসডিতে আক্রান্ত মানুষকে সহায়তা দিয়ে থাকে এমন দাতব্য ও অন্যান্য সংস্থার লিঙ্ক রয়েছে এই পেইজটিতে

পিটিএসডিতে আক্রান্তদেরকে সহায়তাকারী দাতব্য সংস্থা

বেদনাদায়ক কোনো ঘটনার শিকার এবং পিটিএসডির ভুক্তভোগীদেরকে সহায়তা দিয়ে থাকে এমন কিছু দাতব্য সংস্থার কথা এখানে উল্লেখ করা হল:

পিটিএসডি ইউকে – পিটিএসডি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে নিয়োজিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি দাতব্য সংস্থা

কমব্যাট স্ট্রেস – যুদ্ধফেরত সৈনিকদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাজের সাথে জড়িত যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি দাতব্য সংস্থা।

ক্রুজ বিরিভমেন্ট কেয়ার – ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে স্বজনবিয়োগে কাতর মানুষকে সহায়তাকারী একটি দাতব্য সংস্থা

ক্রুজ বিরিভমেন্ট কেয়ার স্কটল্যান্ড – স্কটল্যান্ডে স্বজনবিয়োগে কাতর মানুষের জন্য হিতকর কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত একটি দাতব্য সংস্থা

রেপ ক্রাইসিস – যুক্তরাজ্যে ধর্ষণজনিত মানসিক আঘাতের ভুক্তভোগীদের সহায়তা প্রদানকারী তিনটি সংস্থা হচ্ছে:

ভিক্টিম সাপোর্ট – যুক্তরাজ্যে অপরাধ এবং বেদনাদায়ক ঘটনার শিকার হয়েছে এমন মানুষকে সহায়তা প্রদানকারী তিনটি সংস্থা হচ্ছে:

কৃতজ্ঞতা

এখানে প্রদত্ত তথ্য সঙ্কলনের কৃতিত্ব রয়্যাল কলেজ অফ সাইকায়াট্রিস্ট‍্সের পাবলিক এঙ্গেজমেন্ট এডিটোরিয়াল বোর্ডের (পিইইবি)। এটি তৈরির সময় সর্বোৎকৃষ্ট যেসব প্রমাণাদি বিদ্যমান ছিল সেসবের ভিত্তিতেই এসব তথ্য লেখা হয়েছে। 

এটি সম্পর্কে মতামত প্রদানের জন্য পিটিএসডি ইউকে’কে (PTSD UK) বিশেষভাবে ধন্যবাদ।

বিশেষজ্ঞ সম্পাদক: অধ্যাপক নীল গ্রিনবার্গ 

অনুরোধ সাপেক্ষে এই লেখাটির পূর্ণ তথ্যসূত্র পাওয়া যাবে।

প্রকাশনা: নভেম্বর ২০২১

আসন্ন পুনর্নিরীক্ষণ: নভেম্বর ২০২৪

© Royal College of Psychiatrists

This translation was produced by CLEAR Global (Oct 2023)

Read more to receive further information regarding a career in psychiatry